এবারও সবার পেছনে সিলেট

সিলেটে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে। সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, সিলেট, ৬ মে । ছবি: আনিস মাহমুদ
সিলেটে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে। সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, সিলেট, ৬ মে । ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেট শিক্ষা বোর্ডে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গতবার এই পাসের হার ছিল ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৭৫৭ জন। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩ হাজার ১৯১ জন।

গতবারের চেয়ে পাসের হার কিছুটা বাড়লেও এবার জিপিএ-৫ অনেক কমেছে। তবে পাসের হারের ভিত্তিতে দেশের সব শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সিলেট বোর্ড এবার সবার পেছনে রয়েছে। গতবারও ফলে সিলেট বোর্ড সবার পেছনে ছিল।

সোমবার ফলাফল ঘোষণার পর সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কবির আহমেদ বলেন, গণিত ও সৃজনশীল বিষয়ে পরীক্ষার্থীরা খারাপ করায় এমন ফল হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণিত প্রশ্ন তুলনামূলকভাবে একটু কঠিন ছিল। তাই অনেক শিক্ষার্থী গণিতে ভালো ফল করতে পারেনি। এ ছাড়া সব শিক্ষার্থী এখনো সেভাবে সৃজনশীল বিষয়টি আয়ত্ত করতে পারেনি। এ কারণে সার্বিক ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে ভবিষ্যতে এটি কাটিয়ে উঠতে বোর্ডের উদ্যোগে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

সিলেট শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার সিলেট বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ১৭১ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৮০ হাজার ১৬২ জন। গতবার ১ লাখ ৮ হাজার ৯২৮ জনের মধ্য পাস করে ৭৬ হাজার ৭১০ জন। এবার শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২২। গতবার যা ছিল ২৩। এ ছাড়া একজনও পাস করেনি এ ধরনের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। অবশ্য গতবারও এমন কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না। গেলবারের চেয়ে এবার জিপিএ-৫ কম পেয়েছে ৪৩৪ জন। পাসের হার বেড়েছে দশমিক ৪১ শতাংশ।

ছেলেরা এবারও এগিয়ে
বিগত চার বছরের মতো এবারও ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে ভালো ফল করেছে। এবার ছেলেদের পাসের হার ৭২ দশমিক ২১ শতাংশ এবং মেয়েদের ৬৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪২৬ জন ছেলে এবং ১ হাজার ৩৩১ জন মেয়ে। গত বছর পাসের হার ছিল ছেলেদের ৭১ দশমিক ৩৩ এবং মেয়েদের ৬৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। অন্যদিকে এবার বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখার মধ্যে শুধু মানবিক বিভাগে পাসের হারের ভিত্তিতে মেয়েরা কিছুটা এগিয়ে রয়েছে। এবার বিজ্ঞানে ৯৫ দশমিক ২৫ শতাংশ ছেলে এবং ৯৩ দশমিক ১০ শতাংশ মেয়ে পাস করেছে। মানবিকে ৬২ দশমিক ৬২ শতাংশ ছেলে এবং ৬৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ মেয়ে পাস করেছে। বাণিজ্যে ৭৮ শতাংশ ছেলে এবং ৭৬ দশমিক ৩১ শতাংশ মেয়ে পাস করেছে। তবে গতবার বিজ্ঞান বিভাগ ছাড়া মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রীরা পাসের হারের ভিত্তিতে সামান্য এগিয়ে ছিল।

বোর্ড সেরা সুনামগঞ্জ
সিলেট বোর্ডের অধীন বিভাগের চার জেলার মধ্যে পাসের হারের দিক দিয়ে এবার সুনামগঞ্জ সবার ওপরে। সিলেট শিক্ষা বোর্ডে জেলাভিত্তিক ফলাফল প্রবর্তনের পর এবারই প্রথম সুনামগঞ্জ সবার ওপরে স্থান করে নিয়েছে। এ জেলায় পাসের হার ৭২ দশমিক ২৪ শতাংশ। সুনামগঞ্জে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৬৪ জন। এর মধ্যে ১৩২ জন ছেলে ও ১৩২ জন মেয়ে। পাসের হারের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ সবার ওপরে থাকলেও জিপিএ-৫-এর ভিত্তিতে জেলার অবস্থান চতুর্থ। পাসের হারের ভিত্তিতে হবিগঞ্জ দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও জিপিএ-৫-এর ভিত্তিতে জেলাটির অবস্থান তৃতীয়। হবিগঞ্জের পাসের হার ৭১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এ জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৫৫ জন। এর মধ্যে ছেলে ২৫৩ এবং মেয়ে ২০২ জন। পাসের হারের ভিত্তিতে সিলেট তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও জিপিএ-৫-এর ভিত্তিতে অবস্থান প্রথম। সিলেটে পাসের হার ৭০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪০০ জন। এর মধ্যে ৭৪৪ জন ছেলে এবং ৬৫৬ জন মেয়ে। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে মৌলভীবাজার। এখানে পাসের হার ৬৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। তবে জিপিএ-৫-এর ভিত্তিতে জেলাটি দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এ জেলায় ৬৩৮ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে ছেলে ২৯৭ জন এবং মেয়ে ৩৪১ জন।

প্রথমবারের মতো সুনামগঞ্জ সবার ওপরে অবস্থান করার বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কবির আহমেদ বলেন, ‘এ জেলায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবার সমন্বয় ভালো ছিল। তাই কাঙ্ক্ষিত ফল হয়েছে।’

ভালো বাংলায়, খারাপ গণিতে
পরীক্ষার্থীরা সবচেয়ে ভালো ফল করেছে বাংলা বিষয়ে। এ বিষয়ের দুটি পত্রেই পাসের হার ৯৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। অন্যদিকে সবচেয়ে খারাপ ফল হয়েছে সাধারণ গণিতে। এ বিষয়ে পাসের হার ৭৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। গতবার গণিতে ৭৬ দশমিক ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। তবে বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মের পাশাপাশি গার্হস্থ্য অর্থনীতি ও কর্মশিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছে। এ ছাড়া পরীক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ইংরেজির দুটি পত্রে ৯৫ দশমিক ৯৯, ভূগোলে ৯৫ দশমিক ৪০, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষায় ৯৯ দশমিক ৩২, হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষায় ৯৯ দশমিক ৬৭, উচ্চতর গণিতে ৯৮ দশমিক ১২, সাধারণ বিজ্ঞানে ৯৮ দশমিক ৬৮, কৃষি শিক্ষায় ৯৮ দশমিক ৩৬, পদার্থবিদ্যায় ৯৯ দশমিক ৬৩, রসায়নে ৯৯ দশমিক ০৪, জীববিজ্ঞানে ৯৯ দশমিক ৬৬, অর্থনীতিতে ৯৫ দশমিক ৯৪, হিসাববিজ্ঞানে ৯৫ দশমিক ৬৪, এডুকেশন হেলথে ৯৯ দশমিক ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে
তিনটি বিভাগের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে রয়েছে। এ বিভাগে পাসের হার ৯৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। এ বিভাগে ২ হাজার ৭০৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে ছেলে ১ হাজার ৪০৮ এবং মেয়ে ১ হাজার ২৯৫ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পাসের হার ৭৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৪ জন। এর মধ্যে ছেলে ৯ জন এবং মেয়ে ২৫ জন। এ ছাড়া মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থী পাস করেছে ৬৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। এ বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০ জন। এর মধ্যে ছেলে ৯ জন এবং মেয়ে ১১ জন।