একদল পর্নো ছড়ায়, আরেক দল সাম্প্রদায়িকতা: মেনন

জাতীয় প্রেসক্লাবে আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক সংসদীয় ককাস আয়োজিত নাগরিক সম্প্রীতি সভায় আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
জাতীয় প্রেসক্লাবে আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক সংসদীয় ককাস আয়োজিত নাগরিক সম্প্রীতি সভায় আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ফেসবুক, টুইটার বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম দুই ধরনের মানুষের হাতে। একটি দল পর্নো ছড়িয়ে দিচ্ছে। আরেক দল ছড়াচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা। এর ব্যবহার আমরা দেখেছি।

আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক সংসদীয় ককাস আয়োজিত নাগরিক সম্প্রীতি সভায় আলোচনায় এ কথা বলেন মেনন। আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সভা হয়। মেনন বলেন, ফেসবুকে এই সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কক্সবাজারের রামু ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংখ্যালঘুদের ওপর তাণ্ডব চালানো হয়েছে। এভাবে দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী আমাদের দেশ ধর্মনিরপেক্ষ । দেশে নারী ও সংখ্যালঘুদের ওপর যেভাবে নির্যাতন অত্যাচারের ঘটনা ঘটছে, তাতে আমরা বড় ধরনের সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি বলে আশঙ্কা হচ্ছে। যেসব ঘটনা ঘটে চলেছে, এগুলো ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

আজকের সভায় সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর প্রতিনিয়ত নির্যাতন, জুলুমের ঘটনা ঘটছে। তাঁরা নিপীড়িত হচ্ছেন। তাঁদের ভূমি জবরদখল করা হচ্ছে। তাঁদের মানবাধিকার রক্ষায় সরকার উদাসীন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেখানে যে জেলায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটবে, ওই এলাকার সংসদ সদস্যরা যেন জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসনকে জবাবদিহির মধ্যে নিয়ে আসে।

আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক ককাসের টেকনোক্র্যাট সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, ‘আদিবাসী অধিকার আইন এবং সংখ্যালঘু নিরাপত্তা আইন জাতীয় সংসদের কার্যবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।’ মেসবাহ কামাল বলেন, সংখ্যালঘু মানুষের সম্পদ হরণ করা হচ্ছে। যেন সম্পদ থাকাটা একটা অপরাধ।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সভাপতি রানা দাশগুপ্ত বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন দেশ সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছে। কিন্তু সমাজে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া ঘটনার দিকে তাকালে মনে হয়, আমরা যেন পাকিস্তানি ধ্যানধারণা বা আদর্শ ভুলতে পারছি না। দেশে রাজনীতি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সম্প্রীতির কথা বললেই সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, যদি না রাজনীতির প্রতি তাঁরা আস্থাশীল থাকেন।

বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন দেশে যে নাগরিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা পায়, সেই চেতনা আজ ভূলুণ্ঠিত।
সাবেক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশে প্রতিটি বিবেকবান মানুষ সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। সমাজে সত্যি কথা বলতে গেলে বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলেই তার ওপরে নেমে আসছে হুমকি।
সভাপতির বক্তব্যে সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, সমাজে যারা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন প্রয়োজন। যারা অসাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির কথা বলেন, তাঁদের সঙ্গে রাষ্ট্রের আচরণ নেতিবাচক। এখন দেশে নীরব সাম্প্রদায়িকতা চলছে।
নাগরিক সম্প্রীতি সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, বাংলাদেশ বৌদ্ধ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক ও ইন্টার রিলিজিয়ান হারমোনী সোসাইটির মহাসচিব মনোরঞ্জন ঘোষাল।