ভালো করতে গিয়ে দুর্ভোগ

জামালপুর সদরের বিনন্দরপাড়া-নাকাটি বাজার সড়কে পড়ে আছে ইট ও খোয়া। গত মঙ্গলবার কুটামনি গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
জামালপুর সদরের বিনন্দরপাড়া-নাকাটি বাজার সড়কে পড়ে আছে ইট ও খোয়া। গত মঙ্গলবার কুটামনি গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রায় আট-নয় মাস আগে সড়কে ইটের খোয়া বিছিয়ে রেখে গেছেন। কিন্তু এখনো রোলার বা পিচ ঢালাই হয়নি। চার কিলোমিটার সড়কের কাজ এক বছরে শেষ করার কথা থাকলেও দেড় বছরে অর্ধেক কাজও শেষ করেননি ঠিকাদার। তাতেই যত ভোগান্তি মানুষের।

জামালপুর-সরিষাবাড়ী সড়কের আমতলা এলাকার দক্ষিণ পাশ দিয়ে বিনন্দরপাড়া-নাকাটি বাজার সড়ক। গত মঙ্গলবার সকালে ওই সড়কে ঢুকতেই বিভিন্ন স্থানে চোখে পড়ে বিশাল বিশাল গর্ত। নতুন করে সড়কটি নির্মাণের জন্য গর্তে খোয়া ফেলার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে খোয়া আর ফেলা হয়নি। একটু সামনেই শুধু ইটের খোয়া ফেলা হয়েছে। তবে সেই খোয়া রোলার করা হয়নি। ফলে কোনো যানবাহন চলতে পারে না। কুটামনি গ্রামের অংশে একটি কালভার্ট অর্ধেক নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানের কিছু অংশে খোয়া আছে আবার কোথাও কোথাও খোয়া নেই। দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন এখানে না আসায় সড়কের ইটও চুরি হয়ে যাচ্ছে। আবার যেসব খোয়া ফেলা হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগ নিম্নমানের। একই রকম অবস্থা প্রায় পুরো সড়কে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি ওই সড়কের প্রায় চার কিলোমিটার পাকাকরণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২ কোটি ৫০ লাখ ৪১ হাজার ৫৭৪ টাকায় কাজটি পায় মেসার্স মা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আমিন এন্টারপ্রাইজ। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. কামরুল ইসলাম। কাজটি ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। দেড় বছরে প্রতিষ্ঠানটি ৪৫ শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি। তবে তারা ইতিমধ্যে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫৬ টাকা তুলে নিয়েছে।

কুটামনি গ্রামের বাসিন্দা মো. দেলুয়ার হোসেন বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে সড়কটি পাকাকরণের কাজ শুরু হয়। সবাই ভেবেছিলেন, দীর্ঘদিনের মাটির রাস্তার কষ্ট তাহলে দূর হচ্ছে। কিন্তু কাজ শুরুর কিছুদিন পরই তাঁদের মুখের হাসি মিলিয়ে যায়। মাটির রাস্তা দিয়ে হেঁটে ও ছোটখাটো যানে চলাচল করা যেত। কিন্তু এক বছর ধরে শুধু ইটের খোয়া ফেলে রাখার কারণে যানবাহন তো দূরে থাক, হেঁটেও চলাচল করা যায় না।

রিকশাচালক মো. হানিফ উদ্দিন বলেন, এক বছর ধরে সড়কটা এভাবে পড়ে রয়েছে। ইটের খোয়াগুলো ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকায় রিকশা ঠেলে নিয়ে যেতে হয়। বড় বড় খোয়ার কারণে জুতা ছাড়া হাঁটাও যায় না। সড়কের বিভিন্ন স্থানে আবার গর্ত করে রাখা হয়েছে, সেখানে খোয়াও ফেলা হয়নি। এ সড়ক দিয়ে রিকশা ঠেলে নিয়ে যেতে এখন বড় কষ্ট হয়। তা ছাড়া কাজটাও খুব নিম্নমানের হচ্ছে। ভালো খোয়ার সঙ্গে খারাপ খোয়া দেওয়া হয়েছে।

এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলাচল করে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি এভাবে ফেলে রাখায় লোকজনের সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। স্থানীয় শেখ রাসেল স্মৃতি প্রি-ক্যাডেট অ্যান্ড হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম জানায়, শুধু খোয়া ফেলে রাখায় কোনো যানবাহন চলাচল করে না। ফলে হেঁটে এক বছর ধরে তাদের চলাচল করতে হচ্ছে।

নিম্নমানের কাজের কারণে গত তিন-চার মাস আগে একবার স্থানীয় লোকজন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে আটকে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মেসার্স মা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আমিন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. কামরুল ইসলামের দুটি মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জামালপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সড়কের কাজটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার খবর রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিককে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি ৩০ জুন পর্যন্ত কাজ শেষ করার সময় বাড়িয়ে নিয়েছেন। দ্রুত কাজ শেষ করতে নতুন করে আরও একটি চিঠি দেওয়া হবে। প্রায় ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ। বাকি সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে কাজের চুক্তি বাতিল করা হবে।