এবার বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ

>

আটটি বিভাগে বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে ১৪ জন শিক্ষক নিয়োগ। এমন নিয়োগ কাম্য নয় মনে করছেন একাধিক শিক্ষক। তবে সমস্যা দেখছেন না উপাচার্য।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মেয়াদের শেষ সময়ে এবার বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের ঘটনা ঘটেছে। আটটি বিভাগে বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে ১৪ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত দুই মাসে ২৩ জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ১৩৪ জন কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ ছিল।

বিজ্ঞপ্তির অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষকেরা। তবে এতে কোনো সমস্যা দেখছেন না উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ১৫টি বিভাগে সহকারী ও প্রভাষক পদে মোট ৭১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক নিয়োগের জন্য রীতি ভেঙে দুবার নির্বাচনী বোর্ড বসে। যা ‘নজিরবিহীন’ বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এবার ১৫টি বিভাগের মধ্যে ৮টিতে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব বিভাগে ২৭টি বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে ৪১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মার্চ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার নেয় নির্বাচনী বোর্ড। পদাধিকারবলে এসব বোর্ডের সভাপতি হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চারুকলা ইনস্টিটিউটে তিনটি বিজ্ঞাপিত প্রভাষক পদের বিপরীতে আটজন, ফার্মাসিতে পাঁচটি পদে সাতজন, মার্কেটিং বিভাগে দুজনের বিপরীতে চারজন, বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটে ছয়টি বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে সাতজন, নাট্যকলা বিভাগে চারটি পদের জায়গায় পাঁচজন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগে তিনজনের জায়গায় চারজন, সংস্কৃত বিভাগে দুইজনের বিপরীতে তিনজন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে দুই পদের বিপরীতে তিনজন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সাবেক উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফের সময়ও বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে শিক্ষক নিয়োগের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। তাঁর সময়ে নিয়োগ পাওয়া ২৭১ শিক্ষকের মধ্যে ৭১ জনই বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত।

বিজ্ঞপ্তির বাইরে কোনোভাবেই শিক্ষক নেওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গাজী সালেহ উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৪ সালে শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের মুখে তৎকালীন উপাচার্য এ জে এম নুর উদ্দিন চৌধুরী বিজ্ঞপ্তির অতিরিক্ত শিক্ষক না নেওয়ার লিখিত অঙ্গীকার করেছিলেন। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে বর্তমান উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী তা মানছেন না।

বিজ্ঞপ্তির বাইরে শিক্ষক নিয়োগ দিলে গুণগত মান ও আর্থিক—দুভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মন্তব্য করেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন গাজী সালেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, অতিরিক্ত শিক্ষক দেওয়া হলে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা সুযোগ পান। যোগ্যরা বঞ্চিত হন।

তবে বিজ্ঞপ্তির বাইরে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগে কোনো সমস্যা দেখছেন না উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নিয়োগ কমিটি যদি মনে করে, বিভাগে শূন্য পদ এবং পদের বিপরীতে বাজেট থাকে তবে বিজ্ঞপ্তির বাইরে নিয়োগ দিতে পারে। গত উপাচার্যের সময়ও ৭১ জন এভাবে নিয়োগ পেয়েছিল। আর আমার সময় সবচেয়ে কম নিয়োগ পেয়েছে।’