তপ্ত দিনে রসাল তালশাঁস

বাজারে উঠেছে কচি তালশাঁস। গরমে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য ক্রেতাদের কাছে তালশাঁসের কদর রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে।  ছবি: প্রথম আলো
বাজারে উঠেছে কচি তালশাঁস। গরমে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য ক্রেতাদের কাছে তালশাঁসের কদর রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে। ছবি: প্রথম আলো

বৈশাখের দারুণ দহনে দগ্ধ হচ্ছে চরাচর। একই সঙ্গে গ্রীষ্ম তার ডালা সাজাতে শুরু করেছে নানান স্বাদের ফলসম্ভারে। বাজারে ঝুড়ির ভেতর থেকে এর মধ্যেই উঁকি দিতে শুরু করেছে লাল লিচুর গুচ্ছ। পাকা আমেরও দেখা পাওয়া যাচ্ছে কোথাও কোথাও। আর পাড়া-মহল্লার ফল বিক্রেতাদের ভ্যানগাড়িতে ডাবের পাশাপাশি মিলছে রসাল কচি তালশাঁস।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর শিশু ভোলানাথ কাব্যগ্রন্থের ‘তালগাছ’কবিতায় তালগাছের অতুলনীয় চিত্রকল্প এঁকেছেন। আবার খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীনের ‘ঐ দেখা যায় তালগাছ, ঐ আমাদের গাঁ, ঐখানেতে বাস করে কানাবগির ছা’—এই চরণগুলো শিশুমনে একটা চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে গেছে। গাঁয়ে এখন বকের ছানা থাক বা না থাক, গাছগুলো ভরে উঠেছে কচি তালে। গ্রামের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে তা আসতে শুরু করেছে নগরের পরিসরে।

কারওয়ান বাজার ও রায়েরবাজারের পাইকারি কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আম-লিচুসহ অন্য মৌসুমি ফলের ক্ষেত্রে রাসায়নিক ব্যবহারের আশঙ্কা থাকে। কিন্তু তালশাঁস দীর্ঘ সময় তরতাজা রাখার জন্য এসবের প্রয়োজন হয় না। ফলে গরমে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য ডাবের পানির পাশাপাশি ক্রেতাদের কাছে ভেজালমুক্ত তালশাঁসের কদর বেশি। আবার গত কয়েক বছরে ইফতারের উপকরণ হিসেবেও তালশাঁসের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাধারণত ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা ও যশোর অঞ্চল থেকে তালশাঁসের মূল চালানটা আসে। এখন মৌসুমের শুরুতে কেবল যশোর থেকে কিছু কিছু তালশাঁস আসছে। তাই দামটা তুলনামূলকভাবে বেশি।

গত সোমবার শেওড়াপাড়ার শামীম সরণিতে দেখা গেল, ভ্যানের ওপর তীক্ষ্ণধার দায়ের আঘাতে শক্ত খোলস থেকে সরস তালশাঁস বের করে আনছেন বিক্রেতা আবদুল হাদি। একটা তালে সাধারণত তিনটি করে শাঁস থাকে। প্রতিটি শ্বাস তিনি বিক্রি করছেন ১০ টাকা করে। আর গোটা একটা তালের দাম রাখছেন ২৫ টাকা। তিনি জানান, দুই কাঁদিতে থাকা এমন ৪২টি কাঁচা তাল তিনি কিনেছেন রায়ের বাজার এলাকার পাইকারি কাঁচাবাজার থেকে। প্রতিটি তালের দাম পড়েছে ২০ টাকা।

এ সময় সেখানে পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে তালশাঁস কিনছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা রশীদুল হক। তিনি বলেন, তালশাঁস কেবল স্বাদে ভালো, এমন নয়। শরীরের জন্যও এটা উপকারী। প্রথম প্রথম উঠেছে, তাই একটু বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।

আবার কাছাকাছি দামে গতকাল মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে ডাবের সঙ্গে তালশাঁস বিক্রি করতে দেখা গেল নূর আলমকে। তিনি বলেন, ‘গরমের সময় ডাবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তালশাঁস বিক্রি হয়। কিন্তু এখন জোগান কম থাকায় চাহিদা থাকলেও অনেককে দিতে পারছি না।’

সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিসের ওয়েবসাইটে তালকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অপ্রচলিত ফল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওয়েবসাইটে তালের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বলা হচ্ছে, সব ধরনের ফল দেহের জন্য উপযোগী বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ। তবে তালে এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান আছে। অন্য ফলের তুলনায় এতে ক্যালসিয়াম, লৌহ, আঁশ ও ক্যালরির উপস্থিতি অনেক বেশি।

আবার পুষ্টিবিদেরা বলছেন,তালশাঁসের বেশির ভাগ অংশ জলীয়। ফলে দ্রুত শরীর শীতল করার পাশাপাশি আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে শরীর দ্রুত পানি হারালে তা পূরণ করতে পারে। এ ছাড়া তালশাঁস শরীরের কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়। হাড় গঠনে সহায়তার পাশাপাশি সুস্থ দাঁতের নিশ্চয়তাও দেয়। ফলে সারা দিন রোজার পর অনেককেই পথের পাশের তালশাঁস বিক্রেতার কাছে ভিড় জমাতে দেখা যাচ্ছে।