খুলনায় ছেলেধরা সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় ছেলেধরা সন্দেহে অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে (৬০) পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরঘোনার কাঁঠালিয়া বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, নিহত ওই ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে উপজেলার সাহস ঘোষগাতী গ্রামের চিংড়ি ঘেরমালিক মেহেদী মোড়ল ও কাঁঠালিয়া বাজারের মুদির দোকানি মধুসূদন মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া পুলিশ বাদী হয়ে ডুমুরিয়া থানায় ৫০ থেকে ৬০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, শুক্রবার রাতে রোহিঙ্গা সন্দেহে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধকে স্থানীয় লোকজন পিটিয়ে আহত করে। একপর্যায়ে তাঁকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সে সময় পুলিশ গিয়ে তাঁকে ডুমুরিয়া হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে গুজব ছড়াচ্ছে যে রোহিঙ্গা ও বোরকা পার্টিরা এসে শিশুদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে এবং চুরি ও ডাকাতি করছে। শুক্রবার রাতে এক বৃদ্ধ মাগুরঘোনা গ্রামে গেলে তাঁর পোশাক দেখে ছেলেধরা বলে সন্দেহ হয় এলাকাবাসীর। এ সময় তাঁরা জড়ো হয়ে ওই বৃদ্ধকে গণপিটুনি দেন। এরপর পুলিশ ঘটনা স্থলে পৌঁছে তাঁকে হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ওই বৃদ্ধ রোহিঙ্গা কি না জানি না। তবে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন।

এদিকে গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে দাকোপ উপজেলা সদরে চালনা মোবারক মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের বিপরীতে একটি ভবনে কয়েকজন ‘রোহিঙ্গা ছেলেধরা’ নারীর সন্ধান পাওয়া যায় বলে গুজব রটে। কিছুক্ষণের মধ্যে এলাকায় এ গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনার বিষয়ে দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকাররম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ছেলেধরা’ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। তবে পুলিশ জানতে পারে তাঁরা রোহিঙ্গা বা ছেলেধরার দল এসব কিছু না। তাঁরা বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের বাসিন্দা। এ অঞ্চলে ব্যবসা করতেন। তাঁদের এলাকা ছেড়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কয়েক দিন ধরে ‘ছেলেধরা’ ও ‘বোরকা পার্টি’ আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এলাকায় কোনো অপরিচিত নারী বা পুরুষ দেখলেই মানুষ সন্দেহ করছে। বিভিন্ন প্রশ্নে জর্জরিত করা হচ্ছে তাঁকে। বেশি সন্দেহ হলে ধরে থানায় সোপর্দ করছে। বিশেষ করে বোরকা পরা কোনো নারীকে এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখলে সন্দেহ বেড়ে যাচ্ছে আরও বেশি। মাঝেমধ্যে মারপিটের ঘটনাও ঘটছে। তবে বিষয়টিকে গুজব বলে আখ্যায়িত করছে পুলিশ। বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশ এলাকায় মাইকিং করে এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।