মালয়েশিয়ায় পাচারের জন্য ঢাকায় আনা ২৪ রোহিঙ্গা উদ্ধার

রাজধানী ঢাকার খিলক্ষেত এলাকা থেকে ২৪ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। উদ্ধার হওয়া ২৪ জনের মধ্যে ২২ জনই কিশোরী। শুক্রবার রাতে তাঁদের উদ্ধার করা হয়।

ডিবি পুলিশ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতকে আজ শনিবার এক প্রতিবেদন দিয়ে বলছে, এসব রোহিঙ্গা নাগরিককে মালয়েশিয়ায় পাচার করার জন্য ঢাকায় আনে সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্র। এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক আছেন আরও কয়েকজন।
ডিবি পুলিশ বলছে, এই মানব পাচারকারী চক্র এর আগে কয়েকজন রোহিঙ্গা নাগরিককে মালয়েশিয়ায় পাচারও করেছে।

মানব পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার চারজন হলেন রোহিঙ্গা নাগরিক আইয়ুব মোস্তাকিম (২৪), আইয়ুবের স্ত্রী আসমা (১৯), ওয়ালিদ হোসেন কাজল (৪১) এবং তোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া (৪৮)।
উদ্ধার হওয়া ২৩ জন নারী ঢাকার আদালতের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন। কীভাবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মানব পাচারকারী চক্র তাঁদের ঢাকায় এনেছে, তা জানিয়েছেন এসব রোহিঙ্গা নারী।
মানব পাচারের অভিযোগ এনে আটজন মানব পাচারকারীর নাম উল্লেখ করে গতকাল ডিবির পরিদর্শক মাজেদুল ইসলাম খিলক্ষেত থানায় মামলা করেন। মাজেদুল ডিবির গোয়েন্দা পশ্চিম বিভাগের অবৈধ মাদক উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিমে আছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম আজ শনিবার টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন আগে এই রোহিঙ্গা নারীদের কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ঢাকায় আনা হয়। নারীদের রাখা হয় খিলক্ষেতের একটি বাসায়।

পুলিশ বলছে, রোহিঙ্গা নারীদের যে বাসায় আটকে রাখা হয়, সেই বাসার মালিক ওয়ালিদ হোসেন কাজল। কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে দুই থেকে তিনজনকে করে নারী রোহিঙ্গাকে ঢাকায় এনে খিলক্ষেতের বাসায় আটকে রাখা হয়। বাসায় আনার পর কোনো রোহিঙ্গা নারীকে বাইরে যেতে দেওয়া হতো না। আর পুরুষ রোহিঙ্গা নাগরিককে শাহজাহানপুর একটি বাসায় আটকে রাখা হয়। পুলিশ আসার খবর পেয়ে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা তাঁদের নিয়ে সরে পড়ে।

মানব পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার চারজনকে সাত দিন রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করে ডিবি। শুনানি নিয়ে আদালত প্রত্যেক আসামিকে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। শাহজাহানপুরে পলাতক দুই আসামির বাসা থেকে ৫৪টি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে।

আদালতকে পুলিশ জানিয়েছে, মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য হলেন ইব্রাহীম খলিল। তাঁর বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার দিঘলী গ্রামে। এ ছাড়া মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য আবদুস সবুর, রফিক ওরফে কানা রফিক ও মফিজ উদ্দিনের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায়।

মামলার বাদী ডিবির পরিদর্শক মাজেদুল ইসলাম বলেন, আসামি ওয়ালিদ হোসেন জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা নারীদের কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ঢাকার আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে জানান, গ্রেপ্তার চারজন জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানান, তাঁরা মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য। পলাতক মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যদের যোগসাজশে কক্সবাজারসহ নানা জেলার অসহায় নারী-পুরুষদের বিদেশ পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে আসছিল। ভুক্তভোগীদের এই চক্র বলত, বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসার মাধ্যমে তারা মালেয়েশিয়ায় লোক পাঠিয়ে থাকে। বাস্তবে এই মানব পাচারকারী চক্র জাল পাসপোর্ট ও ভিসা দিয়ে চোরাইপথে মালয়েশিয়ায় যেতে বাধ্য করে।

পুলিশ ও আদালত সূত্র বলছে, যেসব রোহিঙ্গা নারীদের উদ্ধার করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে ১৮ বছর বয়সী নারী আছেন সাতজন। ১৭ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নারী ৪ জন, ১৬ বছর বয়সী নারী ৪ জন এবং ১৫ বছর বয়সী নারীর সংখ্যা ৫ জন। ২০ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নারীর সংখ্যা ২ জন। এ ছাড়া একজনের বয়স ১৯ বছর। ১ বছর ৬ মাস বয়সী ছেলেশিশুও উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার এসব রোহিঙ্গা নারী কক্সবাজারের কতুপালং, থ্যাংখালী, মুছনি ও বালুখালী ক্যাম্পে থাকতেন।

এক রোহিঙ্গা নারী আদালতকে বলেছেন, চার দিন আগে তাঁকে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় এনে খিলক্ষেতের বাসায় আটকে রাখা হয়। বাসার বাইরে যেতে দেওয়া হতো না। ঘরেই খাবার দেওয়া হতো। রোহিঙ্গা নারীদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য রোহিঙ্গা আইয়ুব মোস্তাকিমের নাম।

পুলিশ কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম বলেন, চক্রের সব সদস্যকে গ্রেপ্তার করা গেলে অনেক তথ্যই বেরিয়ে আসবে। জানা যাবে কীভাবে রোহিঙ্গাদের ঢাকায় আনা হয়, কারা পাসপোর্ট তৈরি করেছে।