শহর নয়, যেন ময়লার ভাগাড়

আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন গাজীপুরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে তেমন কিছু এখনো গড়ে ওঠেনি। নেই নির্দিষ্ট কোনো ডাম্পিং স্টেশন। পুরো শহরই বলতে গেলে অপরিচ্ছন্ন।

ঢাকা থেকে যেতে আবদুল্লাহপুর পার হলেই গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা শুরু। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে কিছু দূর পরপরই ময়লা-আবর্জনা চোখে পড়ে। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ সড়ক ধরে এগোলে টঙ্গীর আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামের কোনায়, বোর্ডবাজার এলাকায় মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের সামনে, আরেকটু সামনে মালেকের বাড়ি এলাকায়, চান্দনা চৌরাস্তা পেরিয়ে উল্কা সিনেমা হলের সামনে মূল সড়কের পাশেই গড়ে উঠেছে ময়লার ভাগাড়। এসব ভাগাড় খোলা জায়গায়, মানুষের চলাচলের পথে। এর মধ্যে বোর্ডবাজার থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত এলাকায় রাস্তার দুই পাশে নর্দমার বাইরে আলাদা নালা করা হয়েছে। খোলা নালার পানি কুচকুচে কালো আর ময়লা-আবর্জনা, পলিথিনের ব্যাগে ঠাসা। সারাক্ষণ দুর্গন্ধ ছড়ায়। বেশির ভাগ দোকানে ঢুকতে হলে রাস্তা থেকে কাঠের বা বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে তারপর যেতে হয়।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মী মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রায় বছর দুয়েক হলো এই নালা কাটা হয়েছে। তাঁকে নালার পাশে দাঁড়িয়েই দায়িত্ব পালন করতে হয়। আগে বেশির ভাগ সময় নাকে রুমাল চাপা দিয়ে রাখতেন। এখন অনেকটা সহ্য হয়ে গেছে।

চান্দনা চৌরাস্তা থেকে হাতের ডানের সড়ক ধরে জয়দেবপুর, সিটি করপোরেশনের মূল কেন্দ্র। স্থানীয়দের ভাষায় গাজীপুর শহর। সেখানে যেতেও ময়লার পাহাড় চোখে পড়বে অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। শহরে ঢুকতে সার্ডি রোডের মোড় ও শিববাড়ি মোড়ে ফেলা হয় বসতবাড়ির ময়লা-আবর্জনা। এই দুই জায়গা বাদে রেলক্রসিংয়ের আগ পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তায় কিছু দূর পরপর ময়লা-আবর্জনা চোখে পড়ে। সার্ডি রোডের মোড়ে যেখানে বর্জ্য ফেলা হয় তার একটু ভেতরেই পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ওই জায়গায় আবর্জনা না ফেলতে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন বলছে, আপাতত তারা নিরুপায়।

এখানেই শেষ নয়। টঙ্গী-ঘোড়াশাল সড়কেও কিছু দূর পরপর দেখা যায় খোলা জায়গায় বসতবাড়ির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এই সড়কের আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়ালসড়কের মুখে, শিমুলতলী ব্রিজ এলাকা, মরকুন, আমতলী এলাকায় মূল সড়কের পাশে আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয়। সাধারণ মানুষ এসব জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলছে, বিষয়টি তা নয়। সিটি করপোরেশনই এসব খোলা জায়গায় আবর্জনা স্তূপ করে রাখে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক এস এম সোহরাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ডাম্পিংয়ের জন্য সিটি করপোরেশনের নিজস্ব জায়গা না থাকা, প্রয়োজনীয় লোকবল, গাড়িসহ অন্যান্য সংকটের কারণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। তাঁদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী আছেন ৭৭ জন। পুরাতন টঙ্গী ও গাজীপুর পৌরসভা এলাকা থেকে গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। এর বাইরে অন্য এলাকাগুলো থেকে সপ্তাহে বা নিয়ম করে বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। ১০-১৫টি জায়গায় সেগুলো জমানো হয়। পরে কড্ডায় সড়ক ও জনপথের একটি জায়গায় সেগুলো প্রাথমিক ডাম্পিং করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, মূল শহরের অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও খুব যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তা নয়। জয়দেবপুর জংশন পেরিয়ে ছায়াবীথি, টাংকির পাড়, জোড় পুকুর আবাসিক এলাকার অনেক জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। রাস্তাঘাট ও ফুটপাত পরিচ্ছন্ন রাখতে সিটি করপোরেশনের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। রাস্তা নিয়মিত ঝাড়ু দেওয়া হয় না।

বর্তমান মেয়রের নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম স্লোগান ছিল ‌‘গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি’। শহরের আবর্জনার অব্যবস্থাপনার বিষয়টি স্বীকার করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‌‘আমি পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছি। সত্যি, আমাদের এই গাজীপুর সিটি করপোরেশন একেবারে ময়লা-আবর্জনার মধ্যে। পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম ডাস্টবিন আর আবর্জনার শহর এই গাজীপুর, এটা সত্যি কথা।’ তিনি বলেন, এই অবস্থার কারণ ডাম্পিং স্টেশন না থাকা। ৫৭টি ওয়ার্ডে ডাম্পিংয়ের জন্য ৬০টি জায়গা এবং ক্র্যাশিংয়ের জন্য আরও ৪টি জায়গা প্রয়োজন। গৃহস্থালির আবর্জনা রাখার জন্য প্রায় ২০০ বিঘা জায়গা প্রয়োজন। সে জায়গা সিটি করপোরেশনের নেই। তাঁরা সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছেন। আশা করছেন, দ্রুত জায়গা দেওয়া হবে।