৭২ শতাংশ চালক-সহকারী কখনো চোখের ডাক্তারের কাছে যাননি, ৫০ শতাংশই চোখের সমস্যায় ভুগছেন

বাসচালক ও তাঁদের সহকারীরা দৃষ্টিশক্তির সমস্যায় ভোগার কারণে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রথম আলো ফাইল ছবি
বাসচালক ও তাঁদের সহকারীরা দৃষ্টিশক্তির সমস্যায় ভোগার কারণে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রথম আলো ফাইল ছবি

ঢাকার বাসচালক ও তাঁদের সহকারীদের (হেলপার) ৫০ শতাংশই চোখের সমস্যায় ভুগছেন। ৯৪ শতাংশই মনে করেন, তাঁদের চোখের সমস্যা আছে। অথচ এই বাসচালক ও হেলপারদের ৭২ শতাংশই জীবনে একবারও চোখের ডাক্তারের কাছে যাননি। এঁদের মধ্যে ১২ শতাংশের চোখে ছানির কারণে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন।

বনানীর বিআরটিএ সদর কার্যালয়ে আজ রোববার সকালে এক আলোচনা সভায় এসব তথ্য উঠে আসে। পঞ্চম বিশ্ব নিরাপদ সড়ক সপ্তাহ উদযাপনের অংশ হিসেবে ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) ঢাকা ওয়েস্টের যৌথ আয়োজনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে ব্র্যাকের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

এর আগে গত ২৩ ও ২৪ এপ্রিল ব্র্যাক ও জেসিআইয়ের উদ্যোগে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এক চক্ষুশিবির পরিচালিত হয়। সেখানে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি চালক ও হেলপারের চক্ষু পরীক্ষা করে বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ৩০ জন ডাক্তার ও মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট এই সেবা দেন। এই চক্ষুশিবিরে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ উপলক্ষে রোববারের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আজকের অনুষ্ঠানে চক্ষুশিবিরে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রধান কামরান উল বাসেত। তিনি বলেন, দুই দিনের চক্ষুশিবিরে ৭৬ শতাংশ ব্যক্তিকে চশমা ও ওষুধ দেওয়া হয়েছে। ১২ দশমিক ৬ শতাংশ চালক-হেলপারকে চোখে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর শুধু ওষুধ দেওয়া হয়েছে ৪ দশমিক ১০ শতাংশকে। বাসচালক ও হেলপারদের ২১ শতাংশই দৈনিক ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করেন। এ অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের চিন্তা করা অবাস্তব।

ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক আহমেদ নাজমুল হোসাইন সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। সুপারিশগুলোর মধ্যে আছে—নিয়মিত পরিবহনশ্রমিকদের চোখ পরীক্ষা ও চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া, গাড়িচালকদের চক্ষুসেবায় একটি জাতীয় গাইডলাইন প্রণয়ন করা ও গাইডলাইনের বিষয়ে বিআরটিএর সব কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া।

আলোচনা সভায় উপস্থিত বিআরটিএর পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, ‘ড্রাইভারদের চোখের চিকিৎসায় আরও উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক নাহিদ ফেরদৌসী ড্রাইভারদের চোখের পরীক্ষা করার ওপর জোর দেন। একই প্রতিষ্ঠানের সহযোগী অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম ড্রাইভারদের জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি গাইডলাইন তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন এবং এ কাজে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি রুস্তম আলী খান ও ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক হোসাইন আহমেদ মজুমদার। চালকদের চক্ষু পরীক্ষা ও চিকিৎসার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ভবিষ্যতে এই কর্মকাণ্ডে তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাসে দেন তাঁরা।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি তারা কেশরাম, জেসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট ইরফান ইসলাম প্রমুখ।