'ফিটফাট' রেস্তোরাঁয় পচা খাবার

ধানসিঁড়ি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা পচা–বাসি মাছ–মাংস ফেলা হচ্ছে ডাস্টবিনে। গতকাল দুপুরে  গুলশান–২ এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
ধানসিঁড়ি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা পচা–বাসি মাছ–মাংস ফেলা হচ্ছে ডাস্টবিনে। গতকাল দুপুরে গুলশান–২ এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

ফ্রিজভর্তি হাঁস-মুরগি, কোরাল মাছ, পাবদা মাছ। আছে আরও কয়েক পদের মাছ। বহুদিন আগে রাখা হাঁস ও মাছে পড়েছে ছত্রাকের আবরণ। ফ্রিজ খুলতেই উৎকট গন্ধ নাকে ধাক্কা লাগে।

গতকাল সোমবার গুলশান-২ নম্বরে ধানসিঁড়ি রেস্তোরাঁয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে পুরোনো-পচা-বাসি এসব খাবারের দেখা মেলে। এসব হাঁস, মুরগি, মাছ বিক্রির জন্য বহুদিন আগ থেকে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল।

ভেজাল, পচা ও বাসি খাবার রাখার কারণে ওই রেস্তোরাঁকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গুলশান-২ নম্বর এলাকায় খাদ্যে ভেজালবিরোধী এ অভিযান শুরু হয় বেলা দুইটায়। অভিযানের একপর্যায়ে ওয়েস্টিন হোটেলের উত্তর পাশের ধানসিঁড়ি রেস্টুরেন্টে যান ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে ফ্রিজে সংরক্ষিত খাবার পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায়, ফ্রিজে যেসব খাবার সংরক্ষণ করা ছিল, তার বেশির ভাগই খাওয়ার অনুপযোগী।

অভিযানে থাকা কর্মকর্তারা জানান, ফ্রিজ থেকে রান্না করা একটি হাঁস বের করে দেখা যায় তাতে ছত্রাকের আবরণ পড়েছে। এই হাঁস ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছাড়াই ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করা হতো। এ ছাড়া ফ্রিজে বড় আকারের নষ্ট হয়ে যাওয়া দুটি কোরাল মাছও পাওয়া যায়। রেস্তোরাঁটিতে ৪ হাজার ৮৫০ টাকা পর্যন্ত কোরাল মাছ বিক্রি করা হয়। পাবদা, বড় কাতল, রুই, দেশি মুরগিসহ ফ্রিজ থেকে যা বের করা হয়েছে, সবই ছিল পচা ও বাসি।

রেস্তোরাঁটিতে যখন অভিযান চলছিল, তখন কয়েকজন ক্রেতা সেখানে খেতে এসেছিলেন। তাঁরা ফ্রিজে সংরক্ষণ করা খাবারের এমন পরিস্থিতি দেখে খাবার না খেয়েই চলে যান। রিজিয়া বেগম নামের এক নারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই এলাকায় আমার দোকান আছে। এ কারণে আমি প্রায়ই এই রেস্তোরাঁয় খেতে আসি। রেস্তোরাঁটি ওপরে ফিটফাট। কিন্তু ভেতরের এ অবস্থার কথা জানা ছিল না।’

ধানসিঁড়ি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে ফ্রিজে পাওয়া পচা–বাসি মাছ।  ছবি: প্রথম আলো
ধানসিঁড়ি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে ফ্রিজে পাওয়া পচা–বাসি মাছ। ছবি: প্রথম আলো

নির্বাহী হাকিম আবদুল্লাহ আল মামুন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শরিফকে সতর্ক করে বলেন, তাঁরা রেস্তোরাঁটিকে নজরদারিতে রাখবেন। পরবর্তী সময়ে কোনো অসংগতি পাওয়া গেলে এটি সিলগালা করে দেওয়া হবে।

রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, পচা-বাসি খাবারগুলো ভুলবশত ফ্রিজে রয়ে গেছে।

রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে গিয়ে দেখা গেছে, ভেতরের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন। মশা-মাছি উড়ছে। দুজন নারী শ্রমিক কাজ করছেন। তাঁদের হাতে গ্লাভস নেই। দুর্গন্ধে ওই কক্ষে বেশিক্ষণ অবস্থান করা যাচ্ছিল না। সেখানকার এক শ্রমিক জানান, রমজান মাসে ক্রেতা কম হওয়ার কারণে রান্নার চাপ অনেকটা কম। যখন ক্রেতার চাপ বেশি থাকে, তখন রান্নাঘরের অবস্থা আরও খারাপ থাকে। কারণ, দ্রুত খাবার সরবরাহ করতে
গিয়ে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

এর আগে বনানী এলাকায় দুটি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্নার দায়ে আহেলী কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্টকে ১০ হাজার টাকা ও সালিমার গার্ডেন রেস্তোরাঁকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।