আসামি পালিয়ে বিদেশে, তদন্তে ধীরগতি

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইপ্রবাসী এক প্রতিবেশীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন কুমিল্লার নাছিমা আক্তার (২০)। বিয়ের সাত দিনের মাথায় ঢাকায় বড় বোনের বাসা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। তার পরদিনই দুবাই পাড়ি জমান নাছিমার স্বামী আরিফুল ইসলাম। এরপর কেটে গেছে চার মাস। কিন্তু তদন্তকাজে কোনো অগ্রগতি নেই।

নাছিমার স্বজনদের অভিযোগ, আসামির পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশের কারণে মামলার তদন্তকাজে দেরি হচ্ছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, আসামি দেশের বাইরে থাকায় ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে না পাওয়ায় তদন্তকাজে দেরি হচ্ছে। আর আসামির স্বজনদের দাবি, নাছিমা আত্মহত্যা করেছেন।

গত ১৬ জানুয়ারি মাতুয়াইলের শামীমবাগ এলাকার বোনের বাসা থেকে নাছিমার লাশ উদ্ধার করা হয়। তার পরের দিন নাছিমার স্বামী আরিফুল ইসলামকে আসামি করে কদমতলী থানায় মামলা করেন নাছিমার বড় বোন পাখি আক্তার। মামলার এজাহার অনুযায়ী, মুঠোফোনে প্রেমের সূত্র ধরে ৯ জানুয়ারি শনির আখড়ার একটি কাজি অফিসে বিয়ে করেন নাছিমা ও আরিফুল। দুজনেরই গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। আরিফুল এর আগেও বিয়ে করেছিলেন। সেই পরিবারে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে আছে।

পরিবার সূত্র জানায়, বিয়ের পর নাছিমা-আরিফুল মাতুয়াইলে পাখি আক্তারের বাসায় ওঠেন। পরদিন দুপুরে নাছিমাকে রেখে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গ্রামের বাড়ি চলে যান আরিফুল। নাছিমা যান তার পরদিন। ১৫ জানুয়ারি রাতে তাঁরা আবার পাখির বাসায় আসেন। ১৬ তারিখ সকালে বাসার একটি কক্ষে নাছিমার লাশ পাওয়া যায়। এ সময় আরিফুল বাসায় ছিলেন না। পরে নাছিমার লাশ নেওয়া হয় গ্রামের বাড়িতে। সেখানে তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়ে দাউদকান্দি মডেল থানার পুলিশকে জানান স্বজনেরা। সুরতহাল শেষে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য নাছিমার লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

পুলিশ বলছে, ঘটনার পরদিনই দুবাই চলে যান আরিফুল। এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত করছেন কদমতলী থানার উপপরিদর্শক আবদুল জলিল। গত শনিবার তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে না পাওয়ায় বোঝা যাচ্ছে না ঠিক কীভাবে ঘটনাটি ঘটেছিল। এ ছাড়া আসামি দেশের বাইরে থাকায় তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না।

জলিল বলেন, আসামিকে ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। আর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শারমিন সুলতানা ১৬ এপ্রিল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘লোকবল কম থাকায় দেরি হয়েছে। প্রতিবেদন ডেসপাসে জমা আছে।’

সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাছিমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম ও কালশিরার চিহ্ন আছে। তবে আরিফুলের বরাত দিয়ে তাঁর বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাতে আরিফুল ঘুমানোর সময় নাছিমা ফ্যানের সঙ্গে শাড়ি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ঘুম থেকে উঠে এই দৃশ্য দেখে তাঁর ভাই পালিয়ে যান।

শনিবার দুপুরে নাছিমার বড় বোন পাখি আক্তার বলেন, ‘ফাঁসি দিলে লাশ ঝুলে থাকত। কিন্তু নাছিমার লাশ বিছানায় চিত অবস্থায় ছিল।’ তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু তদন্তের জন্য চার মাস ধরে থানায় ঘুরছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। জানি না পাব কি না।’