চেয়ারম্যানের কর্মীদের হামলা ভাঙচুর, লুটপাটের অভিযোগ

>

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকজন গতকাল মহানন্দা সেতুর টোলঘরে হামলা চালায়।  ছবি: সংগৃহীত
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকজন গতকাল মহানন্দা সেতুর টোলঘরে হামলা চালায়। ছবি: সংগৃহীত

সেতুর টোল না দিয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকজন টোলঘরের কর্মীদের মারধর ও ভাঙচুর করেন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে গতকাল মঙ্গলবার মহানন্দা সেতুর টোল না দিয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়িবহরের লোকজন টোলঘরের কর্মীদের মারধর ও ভাঙচুর করেছেন। এ সময় টোল আদায়কারীদের হাত থেকে টাকাও ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।

মহানন্দা সেতুর টোলঘর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর সদরে অবস্থিত। টোলঘরের পরিচালক বাবু খান, মারধরের শিকার ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ ও কয়েকজন কর্মচারী জানান, সকালে উপজেলা চেয়ারম্যানদের শপথ অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামের গাড়িবহরের লোকজনকে টোল আদায়ের জন্য থামানো হয়। তারা ফিরতি পথে দেবে বলে চলে যায়। বেলা সোয়া একটার দিকে ফেরার পথে তাদের টোলের জন্য থামানো হয়। তারা টোল দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

টোলঘরের কর্মচারীরা এর প্রতিবাদ করলে তারা উত্তেজিত হয়ে বলে, ‘আমরা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও এসপি সৈয়দ নুরুল ইসলামের (সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছোট ভাই কুমিল্লার পুলিশ সুপার) লোক। আমাদের কাছে টাকা চাও কোন সাহসে। আমাদের কোনো টাকা লাগবে না।’ এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তারা মাইক্রোবাস থেকে নেমে মারধর শুরু করে এবং টোলঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। টাকাও ছিনিয়ে নেয় তারা।

ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে বলতে পারব না কত টাকা নিয়েছে। হিসাব করার পর বলতে পারব। তবে অনুমান করছি, লক্ষাধিক টাকা হবে।’ এ ছাড়া যাঁরা টোল আদায়ের কাজ করেন, তাঁদের সবার হাতের টাকাও ছিনতাই করে তারা। ওই সময় যত গাড়ি পার হয়েছে তাদের নির্দেশে কোনো গাড়িই টোলের টাকা দেয়নি। হামলার ঘটনার ১৫–২০ মিনিট পর শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম আসেন। তাঁকে ঘটনার ব্যাপারে জানানো হয়। কিন্তু তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। তারা যা করেছে ঠিকই করেছে।’ এ সময় সদর থানার পুলিশও আসে। পুলিশ ভাঙচুরের দৃশ্য দেখে সৈয়দ নজরুল ইসলামের বহরের কয়েকটি গাড়িকে আটকায়। গাড়ি থেকে নেমে নজরুল ইসলামের লোকজন পুলিশের সামনেই মারমুখী আচরণ করে। একপর্যায়ে সৈয়দ নজরুল ইসলামও হাজির হন। পুলিশ তাদের কিছু না বলে নজরুল ইসলামের সঙ্গে পরিচালক বাবু খানের হাত মিলিয়ে দিয়ে বিষয়টির মীমাংসা করিয়ে দেয়। বহরে ৪০টি মোটরসাইকেল, তিনটি কার ও ১০টি মাইক্রোবাস ছিল বলে কর্মীরা জানান।

বাবু খান প্রথম আলোকে বলেন, শপথ নেওয়ার দিনই তারা এমন সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাল। এরপর না জানি আরও কী ঘটাবে। এদের হাতে সাধারণ মানুষ কি নিরাপদ থাকবে? হাম্মাদ আলী ও আবদুল ওয়াহেদ বলেন, টোল না দেওয়ার জন্যই পরিকল্পিতভাবে সৈয়দ নজরুল ইসলামের লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

টোলঘরের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, প্রায় ২০ মিনিট ধরে টোলঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতেও দেখা যায় একজন নারীনেত্রীসহ কয়েকজনকে। কিন্তু হামলাকারীরা কিছুতেই থামছিল না। বারবার বাধা অতিক্রম করে তারা টোলঘরের ক্যাশ কাউন্টারে দিকে এগিয়ে গিয়ে হামলা চালাচ্ছিল।

ক্যাশ কাউন্টারের ভেতরে থাকা ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, ব্যবস্থাপক মো. মাসুদের সঙ্গে কয়েকজন জানালা দিয়ে উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে থাকে। এ সময় মো. মাসুদকে মারতে উদ্যত হলে তিনি ঘরের দরজা লাগিয়ে দেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে হামলাকারীরা জানালার গ্রিল দিয়ে লাঠি ঢুকিয়ে আক্রমণের চেষ্টা করে। বারবার দরজায় ধাক্কা দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করে। হামলার শিকার মো. মানিক বলেন, ‘আমি তাদের হাতে বেদম মার খাওয়ার পর ছুটে পালিয়ে টয়লেটের ভেতর ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিই। হামলাকারীরা টয়লেটের দরজা ভাঙার চেষ্টা করতে থাকে। এ সময় টিনের চাল উঁচু করে আমি পালাতে সক্ষম হই। পরে তারা টয়লেটের দরজা খুলে আমাকে না পেয়ে পানির পাইপ ভাঙচুর করে।’

সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘টোলঘরের লোকজন আমাকে উদ্দেশ করে অশ্লীল মন্তব্য করলে সঙ্গে থাকা লোকজন উত্তেজিত হয়ে প্রতিবাদ করে। পরে পুলিশ এসে সমঝোতা করিয়ে দেয়। এর বেশি কিছু ঘটেনি।’

সদর থানার পরিদর্শক (অভিযান) ইদ্রিশ আলী বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে ভ্রাম্যমাণ দায়িত্বে থাকা সদর থানার একজন উপপরিদর্শক সেখানে যান। পরিস্থিতি জটিল হলে খবর পেয়ে আমার নেতৃত্বে একদল পুলিশ সেখানে যায়। তবে ভাঙচুর ও মারামারির দৃশ্য আমার চোখে পড়েনি। হালকা ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। ওই সময় উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেখানে আসেন। উভয় পক্ষই বলে যে, একটা ভুল–বোঝাবুঝির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষ পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সমঝোতা করলে আমরা ফিরে আসি। টাকাপয়সা ছিনতাইয়ের ঘটনা আমলে নেওয়ার মতো নয়।’