সংযোগ সড়ক সংস্কার না করায় অচল সেতু

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বেকরিরচর গ্রামে বেকরিরচর গ্রামে সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নেই। ফলে সেতু দিয়ে যান চলাচল করতে পারছে না।  ছবি: প্রথম আলো
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বেকরিরচর গ্রামে বেকরিরচর গ্রামে সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নেই। ফলে সেতু দিয়ে যান চলাচল করতে পারছে না। ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেকরিরচর গ্রামে সেতু আছে। কিন্তু উভয় পাশে সংযোগ সড়ক ব্যবহারের অনুপযোগী। ফলে প্রায় ২৮ লাখ টাকার সেতু সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসছে না।

বেকরিরচর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সেতুর দক্ষিণ পাশে বেকরিরচর ও একতাবাজার গ্রাম। উত্তর পাশে বিরহিম খেয়াঘাট গ্রাম। তিন গ্রামে ১০ হাজার মানুষের বসবাস। একতাবাজার-বিরহিম খেয়াঘাট সড়কে নির্মিত সেতু পারাপার হয়ে তাঁদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ও উপজেলা শহরে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় তাঁদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

গত রোববার সকালে সরেজমিনে মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখা যায়। কেউ হেঁটে পারাপার হচ্ছেন। কেউ কেউ ভ্যান নিয়ে জমি দিয়ে ঘুরে পারাপার হচ্ছেন।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্র জানায়, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেকরিরচর গ্রাম। ইউনিয়নটির একতাবাজার গ্রাম থেকে বিরহিম খেয়াঘাট গ্রাম পর্যন্ত একটি সড়ক রয়েছে। এটি বেকরিরচর গ্রামের ভেতর দিয়ে নির্মিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার। বেকরিরচর গ্রামে তিস্তার শাখানদীর ওপর নির্মিত এই সেতুর জায়গায় একসময় বাঁশের সাঁকো ছিল। বর্ষার সময় সাঁকো পারাপারে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতেন। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে এখানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয় ২৭ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৬ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় অর্থসহায়তা দেয়। বেকরিরচর গ্রামের ইজ্জত আলীর বাড়ি–সংলগ্ন এই আরসিসি সেতুর দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট। কিন্তু নির্মাণের ছয় মাস পর বন্যার পানিতে উভয় পাশের সংযোগ সড়ক ধসে যায়। এ ছাড়া সেতুর এক পাশ দেবে যায়। এদিকে সড়ক ধসে যাওয়ার ১ বছর ১০ মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। আজও সংযোগ সড়ক সংস্কার করা হয়নি। সংস্কার করা হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি। ফলে এ সড়কে পথচারী ও যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বেকরিরচর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, শুকনো মৌসুমে হেঁটে যাতায়াত করা যায়। কিন্তু বর্ষার সময় নৌকা ও কলাগাছের ভেলা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।

একতাবাজার গ্রামের কলেজছাত্র মশিউর রহমান বলেন, বর্ষার সময় সেতুর দুই পাশে স্রোত থাকে। এর মধ্যেই নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে।

বিরহিম খেয়াঘাট গ্রামের ব্যবসায়ী মান্নান সরকার বলেন, সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নেই। ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। কারণ ব্যবসায়ীদের ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে বজরা কঞ্চিবাড়ি এলাকা হয়ে উপজেলা শহর থেকে মালামাল নিয়ে আসতে হচ্ছে। এ কারণে পরিবহন খরচ বেশি পড়ায় স্থানীয় বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা, প্রতি কেজি আলু ১৫ থেকে ২০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ২০ থেকে ৩০ টাকা, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নবী সরকার বলেন, বন্যার পানির চাপে সেতুটির সংযোগ সড়ক ভেসে গেছে। বরাদ্দ না থাকায় সংযোগ সড়ক করা সম্ভব হয়নি। বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে কর্মসৃজন প্রকল্পের মাধ্যমে সংযোগ সড়ক সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।