৭ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল, ১৮টির স্থগিত

নিম্নমানের পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত ২৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এর মধ্যে ৭টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের।

আজ বুধবার বিএসটিআইয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, খোলাবাজার থেকে সংগ্রহ করা ৪০৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৫২টি নমুনার নিম্নমান পাওয়া যায়। নিম্নমানের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের সময়সীমা শেষ হওয়ায় ৭টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

লাইসেন্স বাতিল করা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে আল সাফি ড্রিংকিং ওয়াটার, শাহারী অ্যান্ড ব্রাদার্স (পণ্য-নারজান ড্রিংকিং ওয়াটার), মর্ণ ডিউ পিওর ড্রিংকিং ওয়াটার, আর আর ডিউ ড্রিংকিং ওয়াটার, শান্ত ফুড প্রডাক্টস (পণ্য-টেস্টি, তানি ও তাসকিয়া), জাহাঙ্গীর ফুড প্রডাক্টস (প্রিয়া ব্র্যান্ডের সফট ড্রিংক পাউডার) ও বনলতা সুইটস অ্যান্ড বেকারী (বনলতা ব্র্যান্ডের ঘি)।

বিএসটিআই বলেছে, ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া সময় এখনো শেষ হয়নি। তাই তাদের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। লাইসেন্স স্থগিত হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে সরিষার তেলে সিটি ওয়েল মিল-গাজীপুর (তীর), গ্রিন ব্লিসিং ভেজিটেবল ওয়েল-নারায়ণগঞ্জ (জিবি), শবনম ভেজিটেবল ওয়েল-নারায়ণগঞ্জ (পুষ্টি), বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল-নারায়ণগঞ্জ (রূপচাঁদা); সুপেয় পানির মধ্যে আররা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ (আররা), ডানকান প্রোডাক্ট (ডানকান), দিঘী ড্রিংকিং ওয়াটার (দিঘী); প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের প্রাণ ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই; হলুদের গুঁড়ার মধ্যে ড্যানিশ, প্রাণ ও ফ্রেশ। কারি পাউডারের মধ্যে প্রাণ ও ড্যানিশ; আয়োডিনযুক্ত লবণের মধ্যে এসিআই ও মোল্লা সল্ট; ধনিয়া গুঁড়ার মধ্যে এসিআই পিওর, নুডলসের মধ্যে নিউজিল্যান্ড ডেইরির ডুডলস এবং চিপসের মধ্যে কাশেম ফুডের সান ব্র্যান্ড।

এর আগে ১২ মে বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় নিম্নমান প্রমাণিত হওয়ায় ৫২টি খাদ্যপণ্য অবিলম্বে বাজার থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এসব খাদ্যপণ্য বিক্রি ও সরবরাহে জড়িত লোকজনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতি এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন। যতক্ষণ পর্যন্ত ওই ৫২ পণ্য বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় পুনরায় উত্তীর্ণ না হচ্ছে, ততক্ষণ এসব পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। মাদকবিরোধী অভিযানের মতো খাদ্যে ভেজাল মেশানোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

৫২টি পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার বা জব্দ চেয়ে কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটির (সিসিএস) পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইয়ের দুই কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে আদালতে হাজির হতে বলেন। সেই অনুযায়ী তাঁরা আদালতে হাজির হন। আদালত সব পক্ষের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।

৩ ও ৪ মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএসটিআই সম্প্রতি ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি নিম্নমানের ও ভেজাল পণ্য রয়েছে। এর আগে ২ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিএসটিআই।

বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে খোলাবাজার থেকে ৪০৬টি পণ্যের নমুনা ক্রয় করে বিএসটিআইয়ের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৩১৩টি পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ৫২টি পণ্য পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। বাসসের প্রতিবেদন অনুসারে ভেজাল পণ্যগুলো হলো সিটি অয়েলের সরিষার তেল, গ্রিন বি চিংয়ের সরিষার তেল, শবনমের সরিষার তেল, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের সরিষার তেল, কাশেম ফুডের চিপস, আরা ফুডের ড্রিংকিং ওয়াটার, আল সাফির ড্রিংকিং ওয়াটার, মিজান ড্রিংকিং ওয়াটার, মর্ণ ডিউয়ের ড্রিংকিং ওয়াটার, ডানকান ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার, আরার ডিউ ড্রিংকিং ওয়াটার, দীঘি ড্রিংকিং ওয়াটার, প্রাণের লাচ্ছা সেমাই, ডুডলি নুডলস, শান্ত ফুডের সফট ড্রিংক পাউডার, জাহাঙ্গীর ফুড সফট ড্রিংক পাউডার, ড্যানিশের হলুদগুঁড়া, প্রাণের হলুদগুঁড়া, ফ্রেশের হলুদগুঁড়া, এসিআইর ধনিয়াগুঁড়া, প্রাণের কারি পাউডার, ড্যানিশের কারি পাউডার, বনলতার ঘি, পিওর হাটহাজারী মরিচগুঁড়া, মিষ্টিমেলা লাচ্ছা সেমাই, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মিঠাইর লাচ্ছা সেমাই, ওয়েল ফুডের লাচ্ছা সেমাই, এসিআইর আয়োডিনযুক্ত লবণ, মোল্লা সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ, কিংয়ের ময়দা, রূপসার দই, মক্কার চানাচুর, মেহেদীর বিস্কুট, বাঘাবাড়ীর স্পেশাল ঘি, নিশিতা ফুডসের সুজি, মঞ্জিলের হলুদগুঁড়া, মধুমতির আয়োডিনযুক্ত লবণ, সান ফুডের হলুদগুঁড়া, গ্রীন লেনের মধু, কিরণের লাচ্ছা সেমাই, ডলফিনের মরিচগুঁড়া, ডলফিনের হলুদগুঁড়া, সূর্যের মরিচগুঁড়া, জেদ্দার লাচ্ছা সেমাই, অমৃতের লাচ্ছা সেমাই, দাদা সুপারের আয়োডিনযুক্ত লবণ, মদীনার আয়োডিনযুক্ত লবণ, নুরের আয়োডিনযুক্ত লবণ।