দেশে জন্ম নেওয়া চার শিশুর একটি কম ওজনের

বিশ্বের যে পাঁচটি দেশে কম ওজন নিয়ে বেশি শিশু জন্মায়, তার একটি বাংলাদেশ। সারা বিশ্বের গড়ে প্রতি সাতটি শিশুর মধ্যে একটি কম ওজন নিয়ে জন্মায়। আর দেশে জন্ম নেওয়া চারটি শিশুর একটি কম ওজনের। গত বুধবার প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

‘কম ওজনের শিশু জন্মের হিসাব: মাত্রা ও প্রবণতা, ২০০০ থেকে ২০১৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে দ্য ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ সাময়িকী। গবেষণাটি করা হয়েছে ১৪৮টি দেশের তথ্য নিয়ে। এতে জড়িত ছিলেন লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন, ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গবেষকেরা।

কম ওজনের শিশু বলতে জন্মের সময় আড়াই কেজির কম ওজনকে বোঝানো হয়েছে। ২৮ কোটি ১০ লাখ শিশু জন্মের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণাটি হয়েছে।

গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে কম ওজনের শিশু জন্মের হার কমছে। ২০০০ সালে এটা ছিল ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১২ সালে কমে দাঁড়ায় ২৯ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে।

বিশ্বজুড়েও উন্নতির চিত্র ধরা পড়েছে এই প্রতিবেদনে। যেমন ২০০০ সালে বিশ্বে কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণকারী শিশুর হার ছিল ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৫ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১৫ শতাংশের নিচে।

কিন্তু ডব্লিউএইচও ২০১২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুর হার ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা পূরণ করতে হলে এ গতি দ্বিগুণের বেশি করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন এই গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী ‘লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এর অধ্যাপক হান্নাহ ব্লেনকোউই।

বারডেম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, গর্ভাবস্থায় মায়ের উচ্চ রক্তচাপ, রক্তস্বল্পতা, পুষ্টিহীনতার কারণে কম ওজনের শিশুর জন্ম হতে পারে। আবার গর্ভধারণের ৩৭ সপ্তাহের মধ্যে পানি ভেঙে গেলেও এমন শিশুর জন্ম হয়।

>প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে দ্য ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ সাময়িকী
গবেষণাটি করা হয়েছে ১৪৮টি দেশের তথ্য নিয়ে
২৮ কোটি ১০ লাখ শিশু জন্মের তথ্য বিশ্লেষণ

আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, কম ওজনের শিশুর শ্বাসকষ্ট, জন্ডিস দেখা দিতে পারে, হাড়ও দুর্বল হয়। এমন শিশুর অন্ধত্ব ও বধিরতার ঝুঁকি থাকে। তাই শিশুর এক মাস বয়সের মধ্যে চোখ ও কানের পরীক্ষা করা জরুরি। একই সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শে অণুপুষ্টির (মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট) ঘাটতি পূরণে ব্যবস্থা নিতে হবে।

২০১৫ সালে কম ওজন নিয়ে শিশু জন্মের শীর্ষ পাঁচ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের সঙ্গে আছে কমোরস (২৩.৭), নেপাল (২১.৮), গিনি-বিসাও (২১.১) ও ফিলিপাইন (২০.১)।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে ২০১৫ সালে ২ কোটির (২০ মিলিয়ন) বেশি শিশু খুব কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। গবেষকেরা জানান, আড়াই কিলোগ্রামের (৫ দশমিক ৫ পাউন্ড) কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে, এমন শিশুদের ৯০ শতাংশের বেশির জন্ম হয়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ১৪৮টি দেশে কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুর হার ছিল ১৫ শতাংশের কিছু কম। উন্নত বিশ্বের দেশ হিসেবে সুইডেনে এ হার ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। আর স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জনকারী বাংলাদেশে তা ছিল ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুর সংখ্যা এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশগুলোতে ছিল আনুমানিক ৯৮ লাখ; যা বিশ্বে কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া মোট শিশুর প্রায় অর্ধেক।

গবেষকেরা বলছেন, জন্মগ্রহণকালে শিশুর ওজন আড়াই কিলোগ্রামের কম হওয়ার বিষয়টির সঙ্গে নবজাতকের উচ্চ মৃত্যুহার ও পরবর্তী সময়ে খারাপ স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিবছর বিশ্বে যত নবজাতকের মৃত্যু হয়, তাদের ৮০ শতাংশের বেশিরই জন্ম কম ওজন নিয়ে।