মাগুরায় বিদেশি জাতের লিচুই ভরসা

গাছ থেকে কেউ লিচু পাড়ছেন, কেউ তলায় বসে বাঁধছেন, কেউ আবার তা ঝুড়িতে ভরছেন। মাগুরা সদর উপজেলার হাজরাপুর, ইছাখাদা, হাজীপুর, নড়িহাটি, মিঠাপুরসহ প্রায় ২০টি গ্রামের লিচুবাগানগুলোতে এখন এই একই চিত্র।
তবে চাষিরা বলছেন, এখন যে লিচুটি বাজারে যাচ্ছে, তা দেশি জাতের। রমজানে চাহিদা কম থাকায় এই লিচুতে তেমন লাভ হচ্ছে না। তবে সামনে বিদেশি জাতের লিচুগুলোতে লাভ পুষিয়ে যাবে বলে তাঁদের আশা।

এদিকে সব মিলিয়ে এই মৌসুমে কেবল সদর উপজেলাতেই ২০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে ধারণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।

মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে এ বছর জেলায় ৫৮০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। তবে শুধু সদর উপজেলাতেই ৪৮০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া শালিখায় ৪০, শ্রীপুরে ৩৫ ও মহম্মদপুরে ২৫ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান করেছেন চাষিরা।
কয়েকজন লিচুচাষি বলেন, যে জমিতে লিচুগাছ রয়েছে, বছরজুড়ে সেসব জমিতে অন্য কোনো ফসল হয় না। সারা বছর এই লিচুর দিকেই চেয়ে থাকেন চাষি। চাষের খরচের পাশাপাশি লিচু বাগান থেকে তুলে আনতে অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। শ্রমিকের ব্যয় যে পরিমাণ বেড়েছে, তাতে দাম না পেলে লিচু চাষ থেকে সরে আসতে হবে।

এদিকে গত তিন দশকে ক্রমেই লিচু চাষ বেড়েছে সদর উপজেলায়। বিশেষ করে হাজরাপুর, ইছাখাদা, হাজীপুরসহ কিছু এলাকা এখন পরিচিত লিচু গ্রাম হিসেবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাজরাপুর, হাজীপুর ও রাঘবদাইড় ইউনিয়নের অন্তত ২০ গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ হচ্ছে। দেশি উন্নত একটি লিচুর জাতও রয়েছে এই এলাকায়, দেশজুড়ে তা হাজরাপুরী হিসেবে পরিচিত।

৩০০ লিচুগাছের একটি বাগান কিনেছেন নড়িহাটি গ্রামের লিচু ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, এখন যে লিচুটি বাজারে যাচ্ছে, তা দেশি জাতের হাজরাপুরী লিচু। তিনি যে বাগানটি কিনেছেন, তার অর্ধেক এই লিচু। বাকিটা অংশে বোম্বাই লিচু। তা এখনো পাকেনি। গতবারের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়ায় দেশি লিচুতে কিছু স্পট পড়েছে। তাতেও খুব বেশি সমস্যা হতো না, যদি বাজারে দামটা ভালো পাওয়া যেত। পাইকারি এই লিচু বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ টাকা প্রতি হাজার। গত বছর এই একই লিচু বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। লাভের জন্য এখন বোম্বাই লিচুর দিকেই তাকিয়ে আছেন তিনি।

দামের কারণে হতাশ ইছাখাদার রমিজ আলীও। তিনি বলেন, ‘এত সস্তায় লিচু কোনো দিনও বেচতি হয়নি। এহন বোম্বায়ই ভরসা। রমজানের পর যদি দাম বাড়ে, তালি লাভের মুখ দেখপো।’

এই মৌসুমে প্রতিদিন সদরের ইছাখাদা বাজারে বসছে লিচুর বাজার। বিকেল হলেই ঝাঁকা ঝাঁকা লিচু নিয়ে আসছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও চাষিরা। সেখান থেকে পাইকাররা লিচু কিনে ট্রাকে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে এই ইছাখাদা বাজারে লিচু কিনতে আসেন মানিকগঞ্জের পাইকারী ব্যবসায়ী সোহরাব আলী। এ বছর লিচু কিনছেন প্রতি হাজার গড়ে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। মানিকগঞ্জে এসব লিচু বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার হাজরাপুরী লিচু একটু সস্তায় বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, হাজরাপুরী ছাড়াও মাগুরায় বোম্বাই, চায়না থ্রি, মাদ্রাজিসহ কিছু জাতের লিচুর চাষ হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাহিদুল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। কিছু লিচুতে দাগ পড়েছে, তবে তার পরিমাণ বেশি নয়। চাষিরা এখন হয়তো একটু দাম কম পাচ্ছেন, তবে বিদেশি জাতের লিচুতে তা পুষিয়ে যাবে। লিচুর ভালো ফলনের জন্য জেলার শতাধিক চাষিকে রাজশাহী ফল গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষক এনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ বছর শুধু সদর উপজেলা থেকে ২০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।