তিন বছরের কমিটি চার বছরে

নেত্রকোনা
নেত্রকোনা

দীর্ঘ এক যুগ পর নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৬ মে। কিন্তু চার বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গত রোববার রাতে জেলা কমিটির সভাপতি মো. মতিয়র রহমান খান ও সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফ আলী খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কলমাকান্দা মিলনায়তনে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ। তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা ছিলেন। দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়।

সভাপতি পদে মুক্তিযোদ্ধা চন্দন বিশ্বাস ও মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। চন্দন বিশ্বাস নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনের তখনকার সাংসদ ছবি বিশ্বাসের ছোট ভাই এবং বর্তমান সাংসদ মানু মজুমদারের স্ত্রীর বড় ভাই। আর আনোয়ার আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু সম্মেলনের দীর্ঘ চার বছর পর রোববার রাতে জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়। তবে কমিটি নিয়ে গতকাল বিকেল পর্যন্ত বঞ্চিত কোনো নেতা-কর্মীর ক্ষোভ প্রকাশের খবর পাওয়া যায়নি।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহসভাপতি মো. মিরাজ আলী, সুলতান গিয়াস উদ্দিন, মো. নুরুল ইসলাম, মো. খোরশেদ আলম, সুলতান আহম্মেদ খান, মো. মোসাদ্দেক হোসেন, আবদুল আলী বিশ্বাস, বিজন কুমার সাহা ও মো. ফজলুল হক, যুগ্ম সম্পাদক ইদ্রিস আলী তালুকদার, মো. ইসলাম উদ্দিন ও চান মিয়া দেওয়ানি, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আলমগীর, হাজীউর রহমান ও শামীম আহম্মেদ, দপ্তর সম্পাদক খন্দকার আবদুল মতিন, সহদপ্তর সম্পাদক মো. ফজলুর রহমান, আইনবিষয়ক সম্পাদক মহিদুর রহমান, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আবদুল আলী মণ্ডল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মো. শামছুল ইসলাম, প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক মো. উছমান গণি, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সায়েদুর রহমান, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক তাহেরা খাতুন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক আবদুল কুদ্দুছ, যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক কাজল দে সরকার, শিক্ষা ও মানব সম্পদবিষয়ক সম্পাদক করুণা ভৌমিক, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক মো. জায়েদুর রহমান, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক প্রদীপ সরকার, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, সহপ্রচার ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান এবং কোষাধ্যক্ষ আবদুল মজিদ।

এ ছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন সাংসদ মানু মজুমদার, সাবেক সাংসদ ছবি বিশ্বাস, আবদুল খালেক তালুকদার, সুকুমার সরকার, ক্যামেলিয়া মজুমদার, আবদুল হেকিম, মঞ্জুরুল হক, আবদুল করিম মণ্ডল, হাসান খান পাঠান, হাবিবুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান, আমীন শেখ, জহিরুল ইসলাম, আফরোজা আক্তার, এ কে এম সিদ্দিক মণ্ডল, মো. নায়েব আলী, আবদুল ওয়াহাব, ইসমাইল হোসেন, মাসুদ রানা, আবদুল জলিল, শামছু মিয়া, সাইফুল ইসলাম, মো. আমীন, রফিকুল ইসলাম, মিনারা ইসলাম, এ কে এম হাদিছুজ্জামান, আতিকুর রহমান, আমজাদ হোসেন, মোজাম্মেল হক, বথুয়েল চিসিম, লুৎফুর রহমান, সুভাষ সাহা, জয়নাল আবেদীন, ইঞ্জিল মিয়া ও মো. সাইফুল ইসলাম।

দলীয় সূত্র জানায়, জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে বারহাট্টা, পূর্বধলা, কেন্দুয়া ও সদরে ১৬ বছরের বেশি সময় চলে গেলেও এখনো ত্রিবার্ষিক সম্মেলন করা সম্ভব হচ্ছে না। জেলার পৌর কমিটির সর্বশেষ সম্মেলন হয় ১৯৯৬ সালের অক্টোবরে। পরে ২০১৫ সালের নভেম্বরে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

আওয়ামী লীগের অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সঠিক সময়ে সম্মেলন না হওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। আছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দলের মধ্যে কারও কারও আছে একচ্ছত্র আধিপত্য, ক্ষমতার অপব্যবহার। তাঁদের অভিযোগ, দলাদলিসহ এসব নানা কারণে কোণঠাসা বা নিষ্ক্রিয় আছেন অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মী। উপজেলাগুলোতে দলীয় কার্যালয় প্রতিদিন খোলা থাকলেও নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি তেমন লক্ষণীয় নয়।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান বলেন, উপজেলা থেকে পাঠানো তালিকা যাচাই–বাছাই শেষে কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে বিভিন্ন কারণে কিছুটা সময় লেগেছে। এই কমিটি সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়েছে। বাকি উপজেলাগুলোতেও অতি শিগগিরই সম্মেলন করা সম্ভব হবে।