আট বছরেও হয়নি চিলাহাটি স্থলবন্দর

ঘোষণার আট বছরেও উত্তরাঞ্চলের সম্ভাবনাময় নীলফামারীর চিলাহাটি স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার কাজ বাস্তবায়িত হয়নি। গেজেট প্রকাশেই থমকে আছে এর কাজ। উত্তরের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে শিগগির বন্দরটি চালুর দাবি করছেন ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণির মানুষ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থলবন্দরটি প্রতিষ্ঠিত হলে ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধা বাড়বে। এসব দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে। এ বন্দরে সড়ক ও রেলপথের সুবিধা থাকায় আমদানি-রপ্তানির মালামাল পরিবহনে খরচ কমবে। এ জেলায় অবস্থিত উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাসহ (ইপিজেড) দেশের অন্যান্য ইপিজেডের বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন ব্যবসায়ীরা। এসব কর্মকাণ্ডের ইতিবাচক প্রভাবে দ্রুত পাল্টে যাবে উত্তরাঞ্চলের চিত্র।

নীলফামারী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মারুফ জামান বলেন, স্থলবন্দরটি চালু হলে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত সরকারের প্রচুর রাজস্ব আয় বাড়বে। একই সঙ্গে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ও এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে।

নীলফামারী জেলা সদরের প্রায় ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নে চিলাহাটির অবস্থান। উপজেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার।

ব্যবসায়ীরা জানান, চিলাহাটি ব্রিটিশ আমলে প্রসিদ্ধ ব্যবসাকেন্দ্র ছিল। সে সময় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে এখানে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। গড়ে ওঠে শুল্ক স্টেশন ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। বর্তমানে এখানে রেল ও সড়কপথ রয়েছে। রয়েছে রেলওয়ে স্টেশন, দুটি ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, ব্যবসাকেন্দ্র, পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ও বিজিবি ক্যাম্প। এ ছাড়া এ জেলায় রয়েছে উত্তরা ইপিজেড, দারোয়ানী সুতা কল, ছয়টি পাটকল, তিনটি সিরামিক কারখানা ও বেশ কিছু পোশাক কারখানা। পাশের জেলাগুলোয়ও গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্পকারখানা।

চিলাহাটি স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আবু মুসা মাহমুদুল হক বলেন, ২০১১ সালের জুনে তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান চিলাহাটিতে জনসভায় শুল্ক স্টেশন চালুসহ চিলাহাটি স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এরপর ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে চিলাহাটিকে স্থলবন্দরের বিষয়টি তোলা হয়। একই বছরের ১ আগস্ট সরকারি গেজেটে এ বন্দর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হয়।

নীলফামারী উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ সরকার বলেন, ঘোষিত স্থলবন্দরটি বাস্তবায়নের অভাবে দর্শনা, সোনামসজিদ, বেনাপোল, হিলি ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে অধিক খরচে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি করছেন উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নীলফামারী জেলায় শিল্প ও আইটি পার্কসহ বিভিন্ন কলকারখানা গড়ে উঠছে। দক্ষ জনবল তৈরির জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রশিক্ষণকেন্দ্র। এরপরও অজ্ঞাত কারণে স্থলবন্দর বাস্তবায়ন আটকে আছে।

জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, গত বছরের জুলাইয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। সে সময় নৌসচিব অশোক মাধব রায় গেজেট প্রকাশের কথা জানিয়ে কাস্টমসের ক্লিয়ারেন্সের জন্য অপেক্ষমাণ থাকার কথা জানান। তিনি আরও জানান, সর্বশেষ গত ১১ এপ্রিল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের যুগ্ম সচিব আনিস আহমেদের নেতৃত্বে একটি কমিটি প্রস্তাবিত স্থলবন্দর এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তখন তিনি জানান, প্রস্তাবিত এলাকায় ৩৩ একর জমি লাগবে। এ বিষয়ে প্রস্তাব পেলে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে।