১৩ মাস ধরে 'চাকরি আছে বেতন নেই'

বান্দরবান পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৩ মাস ধরে ‘চাকরি আছে বেতন নেই’। তাঁরা প্রতিদিন কার্যালয়ে আসেন, স্বাভাবিক কাজকর্ম করেন। কিন্তু বেতন-ভাতা পান না। পবিত্র ঈদের মাসেও বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, তহবিল শূন্য।

অপরদিকে লামা পৌরসভায় বকেয়া আছে তিন মাসের বেতন। বান্দরবানে এই দুটিই পৌরসভা।

বান্দরবান পৌরসভার কর আদায় বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় বছরের পর বছর ধরে পৌরসভায় সংকট চলছে। ১৯৮৩ সালে পৌরসভা হওয়ার পর থেকে কোনো বছরই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এবার নিয়মিত ৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর গত বছরের এপ্রিল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ১৩ মাস বেতন বকেয়া রয়েছে। প্রতি মাসে ১৫ লাখ টাকা করে তাঁরা প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা পাবেন।

বান্দরবান পৌরসভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আরমান হোসেন বলেন, গৃহকর, ইজারা, ব্যবসায়িক অনুমতিপত্র (ট্রেড লাইসেন্স) ও অন্যান্য খাতে পৌরসভার বার্ষিক আয় ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ৩৬ জন নিয়মিত ও ১২০ জন অনিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতায় আড়াই কোটি টাকা। এ ছাড়া জ্বালানি, বিদ্যুৎ, আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন সেবা খাতে মোট ৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়ে থাকে। এ অবস্থায়ও সেবা খাতগুলো সচল রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া সব সময় সম্ভব হয় না। তবে পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ সেবা খাতে অনিয়মিত কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়।

বান্দরবান পৌরসভা কর্মচারী কল্যাণ সংসদের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মজুমদার বলেছেন, বেতন না পেয়ে অবস্থা এমন হয়েছে পরিবার ও পাওনাদারের কাছে মুখ দেখানো যাচ্ছে না। আবার পরিবারও চালাতে হচ্ছে।

কর সংগ্রাহক কৃষ্ণ কান্তি দাশ বলেন, খরচ চালাতে না পেরে তাঁর ছেলেকে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে রাখতে পারেননি। বাধ্য হয়ে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে হয়েছে।

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেছেন, আমলাতান্ত্রিক বাধার কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হয়েও তাঁদের সরকারি বেতন–ভাতা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। তাঁদের নিয়োগ, বদলি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সবকিছুই সরকার নিয়ন্ত্রণ করে, আর বেতন–ভাতা দেবে পৌরসভা—এ রকম অদ্ভুত ব্যবস্থা বন্ধ হওয়া জরুরি।

পৌরসভার সচিব তৌহিদুর রহমান বলেন, এবার ঈদেও বেতন-ভাতা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। পরিবার চালানো কঠিন হয়েছে। তার চেয়েও কঠিন হয়েছে পৌরসভা চালানো। সেবা খাতগুলো সচল রাখতেই হবে। কিন্তু পৌরসভার তহবিল নেই। পৌরসভারও ঈদে কিছু খরচ আছে। সে খরচ মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

বান্দরবার পৌরসভার মেয়র ইসলাম বেবী বলেন, সমতলে বিভিন্ন ইজারা, বিনোদন কর পৌরসভা আদায় করে থাকে। কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলে সেগুলো জেলা পরিষদ থেকে করা হয়। পৌরসভাকে আয়ের শুধু ৩০ শতাংশ দেওয়া হয়। এ জন্য পৌরসভার আয় খুবই কম। তারপরও আগের চেয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য বেতন ও অন্যান্য বকেয়া লেনদেন কমিয়ে আনা হচ্ছে। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।

লামা পৌরসভার চিত্র

লামা পৌরসভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শহীদুল করিম বলেন, লামা পৌরসভার বার্ষিক আয় ৮২-৮৩ লাখ টাকা। বেতন–ভাতা, পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পরিচ্ছন্নতাসহ নানা সেবা খাতে প্রতিবছর আয়ের চেয়ে প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা ব্যয় বেশি হয়ে থাকে। এ অবস্থায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন মাস বেতন–ভাতা বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ পৌরসভা উন্নয়ন তহবিল থেকে নেওয়া প্রায় দেড় কোটি টাকা ঋণ রয়েছে।

লামা পৌরসভার চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম বলেন, সেবা খাতে ভর্তুকি ব্যয় বেশি হওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন–ভাতা দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে ঈদের আগে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।