ব্যস্ত চকের যানজট-দুঃখ

পণ্য কেনার পর তা বোঝাই করা হচ্ছে ঠেলাগাড়িতে। রোববার চকবাজারে।  প্রথম আলো
পণ্য কেনার পর তা বোঝাই করা হচ্ছে ঠেলাগাড়িতে। রোববার চকবাজারে। প্রথম আলো

উর্দু রোড থেকেই সড়কে রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ির জটলা। পথচারী–যানবাহনের ভিড়ে হাঁটাও কঠিন। প্রায় ২০০ মিটার সামনে চক সার্কুলার রোডের চিত্র আরও জটিল। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, চকবাজারে কেনাবেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। সড়কে রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়িতে পণ্য ওঠানো নামানোয় ব্যস্ত শ্রমিকেরা।

চিত্রটি গত রোববারের। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে দেশের অন্যতম বড় পাইকারি পণ্যের বাজার চকবাজারে জমে উঠেছে বেচাকেনা। একইভাবে চকবাজারসংলগ্ন বেগম বাজার, মৌলভীবাজার, সোয়ারীঘাট ও ইমামগঞ্জেও ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, যানজটের কারণে চকবাজারের বেচাকেনা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

চকবাজারে চুড়ি, ইমিটেশন অলংকার, গৃহসজ্জা, প্রসাধনীসামগ্রী পাইকারি বিক্রি হয়। আর মসলা ও অন্যান্য খাদ্যপণ্যের জন্য বিখ্যাত বেগম বাজার ও মৌলভীবাজার। এখানে পণ্য কিনতে আসেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খুচরা ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, সারা বছরই চকবাজার, বেগম বাজার ও মৌলভীবাজারে বেচাকেনা চলে। তবে পবিত্র রমজানের আগে তথা শবে বরাতের সময়, রোজার প্রথম দিক ও মাঝামাঝি সময়ে বেচাকেনার চাপ বাড়ে। এই হিসেবে এখন বেচাকেনা ভালো। আর মূল চকবাজার ছাড়াও আশপাশের ফেন্সি মার্কেট, এনায়েত করিম মার্কেট, হানিফ ম্যানসন, খান মার্কেট, হালিমা ম্যানসনসহ অনেকগুলো সুপার মার্কেটে হাজারো দোকান গড়ে উঠেছে। পবিত্র রমজানে এসব মার্কেটেও ভালো বেচাকেনা হয়।

চকবাজারের আমিন কালেকশনের মালিক মোহাম্মদ আলী বিক্রি করেন ইমিটেশনের গয়না ও প্রসাধনী। তিনি বলেন, ঈদ সামনে রেখে চকবাজারে ইমিটেশনের গয়না ও প্রসাধনী সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। অন্য বছরের তুলনায় তাঁর দোকানে এবার বেচাকেনা ভালো। শাপলা স্টোরের ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন বলেন, খুচরা বিক্রি না করায় এই বাজারে বছরের অন্য সময় বেচাকেনা কম থাকে।

পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মসলার বাজার চাঙা থাকে বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজার ও বেগম বাজারের ব্যবসায়ীরা। তাই দোকান ও গুদামে পর্যাপ্ত মালামাল রেখেছেন মৌলভীবাজারের রাকিব স্টোরের মালিক মো. রাকিব ও বেগম বাজারের তানহা এন্টারপ্রাইজের মালিক আবু কাউছার। তাঁরা বলেন, এই দুটি বাজারে সারা বছরই হরেক রকমের মসলা ও মুদি মালামাল বিক্রি হয়। সারা দেশ থেকেই ক্রেতারা এখানে কেনাকাটা করতে আসেন। তবে বিক্রি যা-ই হোক, চকের ব্যবসায়ীদের একটাই দুঃখ, যানজট। এ দুর্ভোগের কারণে ঢাকার বাইরের ক্রেতাদের অনেকেই চকে আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, পুরান ঢাকার এসব বাজারে ধীরে ধীরে কেনাবেচা কমে যাচ্ছে। যানজটের কারণে এখন ঢাকার বাইরের ব্যবসায়ীরা এই এলাকায় কেনাকাটা করতে আসেন না। বড় বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নিজেরাই পরিবেশকের মাধ্যমে পণ্য খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। এই অবস্থায় ঢাকা শহর ও আশপাশের জেলার ব্যবসায়ীদের ওপর এই এলাকার বাণিজ্য টিকে আছে।

রমজান মাস সামনে রেখে পুরান ঢাকার এই এলাকাগুলোতে কী পরিমাণ বেচাকেনা হয়, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বেগম বাজার-মৌলভীবাজার বণিক সমিতির সাবেক সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, পবিত্র রমজান উপলক্ষে এই এলাকায় হাজার কোটি টাকার বেশি বেচাকেনা হয়। তিনি বলেন, ৮ থেকে ১০ বছর আগে বেচাকেনার পরিমাণ আরও বেশি ছিল। যানজট ও পণ্যের দাম বাড়ার কারণে বেচাকেনা ক্রমান্বয়ে কমছে।