নির্মাণকাজে ধীরগতি, সচিবের ক্ষোভ

কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণকাজে ধীরগতি ও গাফিলতি পেয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। নির্ধারিত সময়ে ভবন নির্মাণ শেষ করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। চলতি বছরের জুলাই মাসে হস্তান্তরের কথা থাকলেও অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি।

গত শনিবার সকালে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে এ চিত্র দেখেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। সেখানে জেলা শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তা ও কুষ্টিয়ার স্থানীয় পর্যায়ে সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিরাও একই ধরনের অভিযোগ করেন। তাঁরা বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে শিল্প-সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সঠিক সময়ে নির্মাণ শেষ করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে শিল্প–সংস্কৃতিচর্চায় ব্যাঘাত ঘটছে।

শিল্পকলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, ১৯৬১ সালে পৌরসভার পাশে খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা হয়। সেটি ১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তন হয়ে যায়। সেখানেই জেলার সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করতে থাকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি। কণ্ঠসংগীত, নৃত্যকলা, তালযন্ত্র, নাট্যকলা ও চারুকলা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন করা হয়। জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নিয়ে স্থানীয়ভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং চলচ্চিত্র, সাংস্কৃতিক ও নাট্য উৎসবের আয়োজন করা হয়।

কুষ্টিয়ার সংস্কৃতিচর্চায় আরও গতি বাড়াতে আধুনিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সোয়া এক একর জমিতে অত্যাধুনিক মানের ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলা উচ্চতার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম (শিল্পকলা) মিলনায়তন তৈরি করা হচ্ছে। মীর আকতার লিমিটেড নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায়। চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যে ভবন হস্তান্তরের কথা রয়েছে। কিন্তু কাজে এতটাই ধীরগতি তাতে আরও এক বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ হবে কি না, সন্দেহ।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারের কাজের গাফিলতি ও ধীরগতির ব্যাপারে বারবার বলা হয়েছে।

শনিবার সকালে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব সরেজমিন পরিদর্শনে যান। তিনি প্রকল্প এলাকায় কাজের নকশা ও বিবরণ লেখা সাইনবোর্ড না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে কাজের ধীরগতির ব্যাপারে প্রকল্প পরামর্শক তারিক হাসান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট লিমিটেডের পরামর্শক মাসুম ফেরদৌসের কাছে জানতে চান, তিনি কেন কাজের ভুলত্রুটির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে জানাননি। সচিব ক্ষুব্ধ হয়ে মাসুম ফেরদৌসকে বলেন, ‘আপনার চোখ আমাদের চোখ হওয়ার কথা। কিন্তু হয়েছে ঠিকাদারের চোখের মতো।’ এ ছাড়া ছাদ ঢালাইয়ের কয়েক জায়গায় স্টিলের পাতের পরিবর্তে কাঠ ব্যবহারের বিষয়েও জানতে চান।

মীর আকতার লিমিটেডের এই প্রকল্পের সমন্বয়কারী আবু মুসা বলেন, ভবন নির্মাণের কাজ ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ হতে হয়তো ২০২০ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। কাজের ধীরগতির ব্যাপারে তিনি বলেন, জমিতে কিছু স্থাপনা ছিল সেগুলো ভাঙতে সময় লেগে গিয়েছিল। এ জন্য দেরি হচ্ছে।

পরামর্শক মাসুম ফেরদৌস দাবি করে বলেন, নকশা অনুযায়ী সব কাজ হচ্ছে। ধীরগতির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশল বিভাগে জানানো হয়।