দখল-দূষণে ধুঁকছে গাজীপুরের চিলাই নদ

গাজীপুরে দখল–দূষণে সরু হয়ে গেছে চিলাই নদ। সাম্প্রতিক ছবি।  প্রথম আলো
গাজীপুরে দখল–দূষণে সরু হয়ে গেছে চিলাই নদ। সাম্প্রতিক ছবি। প্রথম আলো

দখল-দূষণে ধুঁকছে গাজীপুরের চিলাই নদ। সিটি করপোরেশনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদটি এখন সরু খালে পরিণত হয়েছে। একসময়ের খরস্রোতা এই নদের জমি দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থাপনা ও কারখানা। ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ নদটির সীমানা চিহ্নিত না করায় দখল ও দূষণ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।

চিলাই নদ রক্ষার দাবিতে ‘নদী রক্ষা কমিটি’সহ বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন, স্মারকলিপি দেওয়া থেকে শুরু করে নানান কর্মসূচি পালন করছে। নদী রক্ষা কমিটি ও এলাকাবাসীর দাবি, চিলাই নদ রক্ষায় অবিলম্বে নদের সীমানা চিহ্নিতকরণ, নদখনন, দখলদারদের উচ্ছেদ ও নদতীর রক্ষায় সবুজ বেষ্টনী তৈরি করতে হবে।

এলাকাবাসী ও নদী রক্ষা কমিটির সদস্যরা জানান, গাজীপুরের নদ-নদীর মধ্যে প্রধান হচ্ছে চিলাই। গাজীপুরের ভাওয়ালের গড় থেকে শুরু হওয়া নদটি বিভিন্ন পথ অতিক্রম করে সদর উপজেলার পুবাইল এলাকার বালু নদে মিশেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিলাই নদের প্রস্থ প্রায় ২৫ মিটার। তবে এখন সংকুচিত হয়ে খালে পরিণত হয়েছে। নদ দখল করে গড়ে উঠেছে বড় বড় কারখানা, বহুতল ভবন। বেশির ভাগ স্থান শুকিয়ে গেছে; যেসব স্থানে পানি আছে, সেগুলোও দুর্গন্ধযুক্ত। শহরের উত্তর পাশের বেশির ভাগ জায়গায় নদ দখল হয়ে গেছে।

এলাকাবাসী জানান, নদ দখল করে নির্মিত হচ্ছে কারখানা। মারকাজ ব্রিজ এলাকায় নিজের জমি দাবি করে দখল করা হয়েছে নদী। গড়া হয়েছে বসতবাড়ি। এসব বসতবাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে শীর্ণকায় চিলাই। শহর-লাগোয়া কালা সিকদারের ঘাটে নদ দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল ভবন। নদে ফেলা হয়েছে ইটের টুকরো, বালু, সিমেন্টের ব্যাগ। বাসাবাড়ির আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদে। আর কালা সিকদার ঘাটের ব্রিজের গোড়া রীতিমতো ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। শ্মশানঘাট এলাকায়ও দখল-দূষণ চলছে পাল্লা দিয়ে। এখানে নদের তীর ঘেঁষে রয়েছে ভাওয়াল রাজের শ্মশান। এটিও এখন বিপন্ন। শহরের পয়োনিষ্কাশন নালা গিয়ে পড়েছে নদে। নদের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে গাজীপুরের বেলাই বিলের। নদ মরে গেলে ওই বিলটিও রক্ষা করা যাবে না। এরই মধ্যে বেলাই বিল দখল করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি মনির হোসেন জানান, চিলাই নদ অস্তিত্বসংকটে রয়েছে। নদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে এখনই উচ্ছেদ অভিযান চালাতে হবে। সম্প্রতি ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চিলাই নদসহ জেলার বিভিন্ন জলাশয় রক্ষার কাজ শুরু করা হয়। নদের খননকাজ শুরুর কিছুদিন পর হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। নদের তীরে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্থাপনাগুলো অপসারণ করা হয়নি। সদর উপজেলার বনখরিয়া থেকে মহানগরের হানকাটা ব্রিজ পর্যন্ত প্রভাবশালীদের দখল-দূষণে নদটি বিপর্যস্ত। নদ দখলে শিল্পকারখানার মালিক থেকে শুরু করে ব্যক্তিপর্যায়ে কেউই পিছিয়ে নেই। এ ছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সব কটি নালা নদে গিয়ে পড়েছে। শিল্পকারখানার জন্য যেমন তরল-বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) প্রয়োজন, তেমনি নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) প্রয়োজন।

নদী বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক সেলিম হোসেন বলেন, চিলাই নদ রক্ষা এখন সময়ের দাবি। তাই যেকোনো উপায়ে নদের পার থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চিলাই নদসহ আশপাশের সব খাল উদ্ধারের জন্য কাজ করা হচ্ছে। চিলাই নদের পাশ দিয়ে ওয়াক ওয়ে নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের সব খাল উদ্ধারে কাজ করা হচ্ছে। নতুন খালও খনন করা হচ্ছে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, শিগগিরই নদের তীর দখল করা শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। ইতিমধ্যে দখলদারদের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। চিলাই নদসহ আরও কিছু জলাশয় খনন করা হবে। এখন নদের প্রায় চার কিলোমিটার খনন করা হবে। খননের মাটি দিয়ে করা হবে ওয়াকওয়ে, চারপাশে বৃক্ষরোপণ করা হবে। এখানে একটি ইকোপার্ক হবে। নদকেন্দ্রিক একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।’