অবৈধভাবে বিক্রির সময় আড়াই হাজার কেজি ভিজিডির চাল জব্দ

ভিজিডি কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ চাল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। আচারগাঁও ইউনিয়ন, নান্দাইল, ২৩ মে। ছবি: প্রথম আলো
ভিজিডি কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ চাল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। আচারগাঁও ইউনিয়ন, নান্দাইল, ২৩ মে। ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের নান্দাইলে এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয় থেকে অবৈধভাবে বিক্রির সময় ভিজিডির (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) ২ হাজার ৪০৬ কেজি চাল জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন। জব্দ করার পর চালের বস্তাগুলো থানায় পাঠানো হয়। তবে এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা অভিযোগ করা হয়নি।

আজ বৃহস্পতিবার উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবন থেকে জব্দ করা হয়।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, আচারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদে আলম মিয়া নামের এক ক্রেতা একটি নছিমন ও একটি পাওয়ার ট্রলিতে চালের বস্তা তুলছেন। এ সময় আলম দাবি করেন, ভিজিডি কার্ডধারী নারীদের থেকে তিনি এ চালের বস্তা কিনেছেন। তবে ইউপিতে তখন কোনো ভিজিডি কার্ডধারী নারী বা বরাদ্দ চাল বিতরণ কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

পাওয়ার ট্রলিতে রাখা বস্তাগুলোতে ‘খাদ্য অধিদপ্তর, নেট ওজন ৩০ কেজি’ লেখা ছিল। এ সময় সেখানে উপস্থিত ইউপি সদস্য মো. মফিজ উদ্দিন ও এমদাদুল হককে চাল বিক্রির কার্যক্রম তদারকি করতে দেখা যায়। এমদাদুল ও মফিজের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। ভিজিডির জন্য বরাদ্দ চাল বিক্রির বিষয়ে তাঁরা দাবি করেন, বস্তাগুলো কার্ডধারীরা বিক্রি করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইউপি ভবনের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে সাজানো চালের বস্তাগুলো থেকে চাল বের করে ট্রলিতে তোলা হচ্ছিল। এর আগেও এমনিভাবে দুটি ট্রলি ভর্তি করে চালের বস্তা এখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

এই সারি থেকে চাল সরানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। আচারগাঁও ইউনিয়ন, নান্দাইল, ২৩ মে। ছবি: প্রথম আলো
এই সারি থেকে চাল সরানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। আচারগাঁও ইউনিয়ন, নান্দাইল, ২৩ মে। ছবি: প্রথম আলো

এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আচারগাঁও ইউনিয়নে ২১১ জন দুস্থ মাকে ভিজিডি কার্ড দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এই চার মাসের বরাদ্দ হিসেবে প্রতি কার্ডধারীকে চার বস্তা (১২০ কেজি) চাল একসঙ্গে দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার ১৭৬টি কার্ডের বরাদ্দ বিতরণ করা হয়েছে। তবে বাকি ৩৫টি কার্ডের বরাদ্দ ১৪০ বস্তা চাল ইউপি ভবনে রয়েছে। বৃহস্পতিবার চাল বিতরণ করা হচ্ছে কি না? জানতে চাইলে এ বিষয়ে ইউপি সচিব কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেননি।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আচারগাঁও ইউনিয়নের ভিজিডি বরাদ্দ বিতরণ তদারকির দায়িত্বে আছেন নান্দাইল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম।

মুঠোফোনে রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বুধবার তিনি চাল বিতরণ কার্যক্রম তদারক করেছেন। আজকে চাল বিতরণের কোনো কার্যক্রম ছিল না। এ বিষয়ে জানার জন্য আচারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান এ কে এম মোফাজ্জল হোসেনকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা আক্তার বলেন, খবর পেয়ে চালের বস্তাগুলো জব্দ করে থানায় পাঠিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, চাল জব্দের সময় ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিডির কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম মিয়া বলেন, জব্দ করা চাল তাঁরা বুঝে পেয়েছেন। তবে এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ পাননি।