উৎপাদন তিন লাখ, কেনা হবে মাত্র দুই হাজার টন

রাজশাহীতে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার উদ্যোগে ন্যায্যমূল্য না পাওয়া কৃষকেরা আশায় বুক বেঁধেছেন। কিন্তু এ নিয়ে চিন্তিত খাদ্যগুদামের কর্মকর্তারা। কারণ, জেলায় ধানের উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন। আর কেনা হবে মাত্র ২ হাজার ১২ মেট্রিক টন।
অভিযোগ রয়েছে, কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার কথা থাকলেও অতীতে প্রকৃত কৃষকেরা সরকারি খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করার সুযোগ কমই পেয়েছেন। ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে কম মূল্যে ধান কিনে তা খাদ্যগুদামে সরবরাহ করেছেন। এবার বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় দেশব্যাপী আলোচনা–সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষককে খাদ্যগুদামে ধান নিয়ে আসার জন্য মাইকিংও করা হয়েছে।
গত বুধবার রাজশাহী জেলা প্রশাসক এস এম আবদুল কাদের পবা উপজেলায় কৃষকদের বাড়ি গিয়ে ধান কেনেন। তানোরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. নাসরিন বানুও কৃষকের বাড়ি গিয়ে ধান কিনেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার গোদাগাড়ীর ইউএনও শিমুল আকতার কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান কিনেছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এবার জেলায় প্রায় ৭০ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টন। সরকারিভাবে এর সামান্য অংশই কেনা হবে। জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, রাজশাহীতে সরকারিভাবে এবার মাত্র দুই হাজার ১২ মেট্রিক টন বোরো ধান কেনা হবে।
জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধান চাষ হয়েছে বাগমারা উপজেলায়। এখানে ২০ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। কৃষি উপকরণ সহায়তা পাওয়া কার্ডধারী কৃষক রয়েছেন ৮৭ হাজার ৯৭২ জন। এ উপজেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৩ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে সরকারিভাবে কেনা হবে মাত্র ৬০০ মেট্রিক টন।
সরকারিভাবে খাদ্যগুদামে ১ হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান কেনার কথা কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধান কেনার আনুষ্ঠানিকতাও সহজ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ফলে কৃষকদের মধ্যে এখন খোলা বাজারে ধান বিক্রি না করে খাদ্যগুদামে বিক্রি করার আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। আর এ নিয়ে চিন্তিত খাদ্যগুদামের কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাদ্যগুদামের একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, যেভাবে প্রচার করা হচ্ছে, তাতে সাড়া দিয়ে যদি কৃষকেরা ধান নিয়ে আসেন। তাহলে তাঁরা চরম বিপাকে পড়বেন। উৎপাদনের তুলনায় তাঁদের কেনার বরাদ্দ খুবই কম। বরাদ্দ ফুরিয়ে গেলে কৃষককে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এ নিয়ে নতুন সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
উৎপাদনের তুলনায় এই অল্প পরিমাণ ধান কেনা হলে তা বাজারের ওপরে কী প্রভাব ফেলবে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক নাজুমল হক ভূঁইয়া বলেন, যে পরিমাণ ধান কেনা হবে, সেটাকে নগণ্যও বলা যায় না। এখনই বাজারে হয়তো এর তেমন প্রভাব পড়বে না। তবে সরকারের চাল রপ্তানির একটা পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি গত বুধবার পবায় জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ধান কিনতে গিয়ে কৃষকদের এই বার্তা দিয়ে এসেছেন যে অনেকেই বলবে, ধানের দাম আর বাড়বে না। এতে যেন কৃষকেরা বিভ্রান্ত না হন। কৃষকদের ধান আরও কিছুদিন ধরে রাখার পরামর্শ দিয়ে এসেছেন তিনি।