যানজটময় ৩০ কিলোমিটার এখন ৩০ মিনিটেই পার

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিভীষিকাময় অংশটুকুর নাম ছিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর। দূরত্ব ৩০ কিলোমিটারের মতো। অথচ তীব্র যানজটের কারণে এই পথ কতক্ষণে পাড়ি দিতে পারবেন, তা নিয়ে চিন্তায় থাকতেন যাত্রীরা। এসবই এখন অতীত। কারণ, এই পথ এখন পাড়ি দেওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩০ মিনিটে!

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা ও গোমতী নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু এবং দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন। এরই সুফলে ৩০ কিলোমিটারের যানজটময় পথ পাড়ি দেওয়া যাচ্ছে ৩০ মিনিটে।

দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতুর প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মো. নুরজ্জামান আজ রোববার বলেন, নতুন দুটি চার লেনের সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মানুষের যাত্রা আরামদায়ক হয়েছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষও এর সুফল পাবেন। আবার পুরোনো দুই লেনের সেতু দুটিরও সংস্কার কাজ চলমান। আগামী ডিসেম্বরে সংস্কার কাজ শেষ হবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে অবস্থিত চার লেনের মেঘনা-গোমতী সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে। এতে যানজট কমে গেছে। নির্বিঘ্নে যান চলাচল করছে। ছবিটি আজ রোববার সকাল নয়টায় গোমতী সেতু থেকে তোলা। ছবি: আবদুর রহমান ঢালী
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে অবস্থিত চার লেনের মেঘনা-গোমতী সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে। এতে যানজট কমে গেছে। নির্বিঘ্নে যান চলাচল করছে। ছবিটি আজ রোববার সকাল নয়টায় গোমতী সেতু থেকে তোলা। ছবি: আবদুর রহমান ঢালী

আজ বেলা দেড়টায় কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় ঢাকা থেকে আসা যাত্রী গিয়াস উদ্দিন, আবদুল করিম, সোহেল মিয়া, বিপ্লব হোসেন ও জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, তাঁরা নিয়মিত ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন। গত শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত এখান থেকে ঢাকায় পৌঁছতে চার থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগত। আর আজ ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাস গৌরীপুর পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার অতিক্রম করতে মাত্র ৫০ মিনিটে। সে হিসাবে তীব্র যানজট লেগে থাকা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর পর্যন্ত পাড়ি দিতে লেগেছে ৩০ মিনিট।

চালক রিয়াজ মিয়া, মো. ফারুক, লিটন মিয়া, শামীম হোসেন, শাহীন আলম ও ইকবাল হোসেন আজ দুপুরে দাউদকান্দির পেন্নাই এলাকায় বলেন, দীর্ঘদিন মহাসড়কে যানজটে নাকাল হওয়ার পর তাঁরা স্বস্তির দেখা পেয়েছেন। তাদের ভাষ্য, হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কে থামিয়ে বিরক্ত না করলে ঈদে তাঁরা আনন্দে গাড়ি চালাতে পারবেন।

ঢাকার দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কুমিল্লার বাসিন্দা মো. তানভীর গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ভোগান্তির পর আজ কুমিল্লায় ফিরতে আরাম পেলাম। মেঘনা, গোমতী সেতু অতিক্রমের সময় মন আনন্দে ভর উঠল।’

এত দিন চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানবাহনগুলো দুই লেনের গোমতী ও মেঘনা সেতুতে ওঠার পর সেতুর দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হতো। বিশেষ করে শুক্রবার ও শনিবার, ছুটির দিন, ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের সময় যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করত। এর ফলে ভোগান্তি পোহাতে হতো চালক ও যাত্রীদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে রোগী, নারী-শিশুসহ সব যাত্রীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো। এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেয়ে তাই স্বভাবতই আনন্দিত এই পথের চালক-যাত্রীরা।