আদালত স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপন স্থগিত চেয়ে খালেদার রিট

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা নাইকো দুর্নীতি মামলা বিচারের জন্য পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগার থেকে বিশেষ জজ আদালত কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরে জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থগিত চেয়ে রিট হয়েছে। খালেদা জিয়ার পক্ষে আজ রোববার তাঁর আইনজীবীরা রিটটি দায়ের করেন।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে আগামীকাল সোমবার এই রিটের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী কায়সার কামাল।

পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে অবস্থিত পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের একটি কক্ষে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে (বিশেষ জজ আদালত-৯) মামলাটির কার্যক্রম চলছিল। তবে নিরাপত্তার কারণ উল্লেখ করে ১২ মে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর ভাষ্য, সরকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এ বিচারাধীন মামলাটির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে নির্মিত ২-নম্বর ভবনকে অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করেছে। বলা হয়, মামলাটির বিচার কার্যক্রম ওই ভবনের অস্থায়ী আদালতে অনুষ্ঠিত হবে।

এ অবস্থায় ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে প্রজ্ঞাপন বাতিল চেয়ে ২১ মে আইন সচিব বরাবরে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, এ সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার বা বাতিল না করা হলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ওই নোটিশের জবাব না পেয়ে রোববার রিটটি করা হয় বলে জানান আইনজীবী কায়সার কামাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়া দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বিচার প্রকাশ্য ও উন্মুক্ত হওয়া উচিত, যেখানে পাবলিক সহজে বিচারকার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। কেরানীগঞ্জ কারাগারের একটি কক্ষে কখনো পাবলিক ট্রায়াল হতে পারে না। মামলার বিচার মহানগর এলাকার মধ্যে হতে হবে আইনে আছে। অথচ কেরানীগঞ্জ কারাগার ঢাকা মহানগর এলাকার আওতাধীন নয়। এ ছাড়া প্রজ্ঞাপনটি আইনের দৃষ্টিতে সমতা সংক্রান্ত সংবিধানের ২৭ ও আইনের আশ্রয়-লাভের অধিকার সংক্রান্ত সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৯ এর (১) ও (২) উপধারা বিরোধী—এসব যুক্তিতে রিটটি করা হয়।

রিট আবেদনে দেখা যায়, নাইকো মামলা সংক্রান্ত ১২ মে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ ঘোষণা করা এ মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে। রুল হলে তা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় প্রজ্ঞাপনের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র ও আইন সচিবসহ তিনজনকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে।

নাইকো মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি চলছে। ৩০ মে শুনানির পরবর্তী দিন রয়েছে। গত ১৯ মে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান ওই দিন ধার্য করেন।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, হত্যা, নাশকতা, রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিসহ ৩০টির বেশি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় রায় হয়েছে। অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর হাইকোর্টেও রায় হয়েছে। তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল বিভাগে আপিল করেছেন, যা শুনানির অপেক্ষায়। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের সাজা ও জরিমানার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছেন খালেদা জিয়া। গত ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট ওই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে তার ক্ষেত্রে জরিমানা স্থগিত করে নথি তলবের আদেশ দিয়েছেন।

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানান তাঁর আইনজীবী।