পঙ্গু হাসপাতাল তাঁকে অস্ত্রোপচারের তারিখ দিল ৩ বছর পর

২০২২ সালের ২১ মার্চ ভর্তির তারিখ দেওয়া হয় মাসুম বিল্লাহকে
২০২২ সালের ২১ মার্চ ভর্তির তারিখ দেওয়া হয় মাসুম বিল্লাহকে

দুর্ঘটনায় মো.মাসুম বিল্লাহ (২১) নামের এক তরুণের পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। চিকিৎসা নিতে গত ২৩ মার্চ রাজধানীর শ্যামলীতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতালে) যান তিনি। চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে এক মাস পর যেতে বলেন। নির্ধারিত সময়ে তিনি কাগজপত্র নিয়ে হাজির হলে তাঁকে তিন বছর পর ২০২২ সালের ২১ মার্চ অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তির তারিখ দেওয়া হয়।

ভর্তির তারিখ জেনে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে যান মাসুম বিল্লাহ। তাঁর দুর্ভোগের কথা জানিয়ে সময় এগিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। হাসপাতাল থেকে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এর আগে তারিখ দেওয়া সম্ভব নয়। প্রয়োজনে তিনি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন।

মাসুম বিল্লাহ এখন মিটফোর্ড হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডের ৪ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। এ হাসপাতালে গতকাল রোববার তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে।

মাসুম বিল্লাহ প্রথম আলোকে জানান, তিনি বরিশালের নথুল্লাবাদ এলাকার বাসিন্দা। বাবা হুমায়ুন কবির ও মা আসমা বেগম। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। জনতা ব্যাংক, বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ে ক্যাজুয়াল লেবার হিসেবে কাজ করছেন। একই সঙ্গে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজের সমাজকল্যাণ বিভাগে সম্মান দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। বরিশাল শহরে মাস তিনেক আগে সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় যান আলফা ধাক্কা দিলে তিনি পড়ে গিয়ে আহত হন। তাঁর বা পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক কবিরুজ্জামানের চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠান। তাঁর পরিচিত ডা. হারুনুর রশিদ খানের সঙ্গে দেখা করতে বলেন।

মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাসুম বিল্লাহ
মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাসুম বিল্লাহ

মাসুম বলেন, ‘২৩ মার্চ পঙ্গু হাসপাতালের বহির্বিভাগে যাই। টিকিট কেটে ডাক্তার দেখাই। ডাক্তাররা আমার টেস্টের কাগজপত্র দেখেন এবং এক মাস থেরাপি নিতে বলেন। এক মাস থেরাপি নেওয়ার পর দেখা করি। তখন ২০ থেকে ২২ জনের ফাইলের সঙ্গে আমার ফাইলটি নেন চিকিৎসকেরা। অপেক্ষা করার পর তাঁরা টিকিটে ২০২২ সালের ২১ মার্চ ভর্তির ডেট লিখে দেন।’ তিনি জানান, তিন বছর পর ভর্তির তারিখ দেখে তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েন। বলেন, ‘আমি পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারি না। পায়ে ব্যথা অনেক। আমার দুর্ভোগের বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত অপারেশন করার অনুরোধ জানাই। কিন্তু তাঁরা জানান, সিরিয়াল অনেক লম্বা। আগে করতে চাইল বেসরকারি হাসপাতালে যান।’

এ ব্যাপারে পঙ্গু হাসপাতালের কনসালট্যান্ট হারুনুর রশিদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, হাসপাতালে লিগামেন্টের রোগী ভর্তির জন্য মাত্র দুটি বেড আছে। সপ্তাহে দুজনের বেশি ভর্তি করা যায় না। রোগী আসেন দিনে ৬০ জন। তাই অস্ত্রোপচারের দীর্ঘ অপেক্ষার সারিতে থাকতে হয় রোগীকে।

একজন রোগী অস্ত্রোপচারের জন্য তিন বছর অপেক্ষা করতে পারেন কি না, তা জানতে চাইলে হারুনুর রশিদ খান বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এখানে এটাই সিস্টেম। সরকারি হাসপাতালে কোনো রোগীকে “না” বলা যাবে না। কিন্তু এখানে বেডস্বল্পতা রয়েছে। হাসপাতালে ৫০০ বেডের নতুন ভবন হচ্ছে, তখন সমস্যার কিছু সমাধান হতে পারে।’ 

মাসুম বিল্লাহর অভিযোগ, ‘হাসপাতাল থেকে তাঁকে বলা হয়েছে আগে চিকিৎসা করতে চাইল বেসরকারি হাসপাতালে যান।’ এ ব্যাপারে কনসালট্যান্ট হারুনুর রশিদ খান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর এই বক্তব্যটি সঠিক নয়। কারণ এই হাসপাতাল থেকে এমন কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, ‘মাসুম বলেছেন তাঁকে বরিশালের এক চিকিৎসক আমার কাছে পাঠিয়েছেন। আদতে কোনো চিকিৎসকের সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি।’ 

মাসুম জানান, পঙ্গু হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তির লম্বা তারিখ পেয়ে তিনি মিটফোর্ড হাসপাতালে যান। ৭ মে তিনি অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি হন। গতকাল তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে।