মির্জাপুরে কোনো কর্মকাণ্ডে নেই ছাত্রদল

সংগঠনটির বর্তমান ও সাবেক কমিটির কয়েকজন নেতার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা ছাত্রদলের ১৪১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ওই কমিটিতে বিবাহিত আর অছাত্ররাই প্রাধান্য পান। বিশেষ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা দুজনের কারও ছাত্রত্ব ছিল না। তাঁদের মধ্যে সভাপতি ফরিদ মিয়া ১৯৯২ সালে এসএসসি পাস করেন। আর এক মেয়ের বাবা সাইদুর রহমান ১৯৯৫ সালে এসএসসি পাসের পর ঢাকায় চলে যান। সেখানে ঢাকা কলেজে লেখাপড়া করেন তিনি। ২০০৩ সালে মির্জাপুরে ফিরে শুরু করেন মুঠোফোনের ব্যবসা। ২০০৭ সালে জাপানে পাড়ি জমান। দেশে ফিরে ২০১১ সালে বিয়ে করেন। এরপর মাটির ব্যবসা শুরু করেন। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার কিছুদিন পর তিনি আবার বিদেশে যান। এখন পর্যন্ত তিনি দেশে ফেরেননি।

উপজেলা ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ তিন বছর হলেও আগের কমিটি টিকে ছিল প্রায় ১১ বছর। ২০০৩ সালের ১৫ অক্টোবর মো. আজাহার মিয়াকে সভাপতি ও এস এম মহসীনকে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা ছাত্রদলের আগের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। মো. আজাহার মিয়া ২০০৯ সালের শেষের দিকে উপজেলার বাশতৈল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হওয়ায় ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. ফরিদ মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর থেকে ফরিদ মিয়া ও এস এম মহসিন ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ নানা কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করায় ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি উপজেলা ছাত্রদল ছাড়াও মির্জাপুর পৌরসভা ও মির্জাপুর কলেজ ছাত্রদলের কমিটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ২ বছর ৯ মাস কমিটি ছাড়াই চলে ছাত্রদলের কর্মকাণ্ড। পরে ২০১৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নতুন কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমান কমিটির মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়েছে দুই বছর আগে। কিন্তু নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি। এ কারণে তরুণেরা নেতৃত্বে আসছেন না। গড়ে উঠছে না নতুন নেতৃত্ব। তা ছাড়া বর্তমান কমিটিও কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত নয়। নেতা-কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্বও চলছে প্রকাশ্যে।

উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বিদেশে যাওয়ার পর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ছাত্রদলের সভাপতি কমিটির তিন নম্বর যুগ্ম সম্পাদক মোর্শেদ এলাহীকে উপজেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। কিন্তু গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের বিধান রয়েছে। এ বিধান না মানায় স্থানীয় ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। পরে লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদল উপজেলা ছাত্রদলের এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক আরিফুজ্জামানকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। এরই মধ্যে মোর্শেদ এলাহীও বিদেশে পাড়ি জমান।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কিছুটা কাজ করলেও নির্বাচনে ভরাডুবির পর থেকে তাঁদের কাউকেই মাঠে দেখা যাচ্ছে না। জানতে চাইলে ২০১৪ সালে করা কমিটির সহসভাপতি (স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেওয়া) আলম মৃধা বলেন, ‘একসময় মির্জাপুরে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্রদল সাংগঠনিকভাবে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল। কিন্তু বর্তমানে সে অবস্থা নেই। মেয়াদ শেষ হওয়ামাত্রই নতুন কমিটি গঠন করা উচিত। তা না হলে নতুন নেতৃত্ব আসে না। সাংগঠনিক কাজও জোরদার হয় না।’

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। এখন টিকে থাকাটাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। তবে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে সভাপতিকে নিয়ে বিএনপির নেতাদের পরামর্শে শিগগিরই তৃণমূল পর্যায়ে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডি এম শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক নেতা-কর্মী মামলার বেড়াজালে আটকা পড়েছিলেন। এ জন্য সময়মতো উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠন সম্ভব হয়নি। সংগঠনটির হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে দ্রুত দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।