এক বছর থেমে আছে আলী আমজদের ঘড়ির কাঁটা

ঐতিহ্যবাহী আলী আমজাদের ঘড়ি প্রায় এক বছর ধরে বিকল। রোববার বিকেলে সিলেট নগরের চাঁদনীঘাট এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
ঐতিহ্যবাহী আলী আমজাদের ঘড়ি প্রায় এক বছর ধরে বিকল। রোববার বিকেলে সিলেট নগরের চাঁদনীঘাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

চাঁদনী ঘাটের সিঁড়ি/ আলী আমজদের ঘড়ি/ জিতু মিয়ার বাড়ি/ বঙ্কু বাবুর দাঁড়ি। এমন একটি প্রবাদতুল্য পঙ্‌ক্তি সিলেট অঞ্চলে প্রচলিত ছিল। এর মাধ্যমে সিলেটের পরিচিতি-সূচক চারটি ঐতিহ্য তুলে ধরতেন আগেকার মানুষেরা।

বঙ্কু বাবু মারা গেছেন সেই কবে। বাকি তিনটি ঐতিহ্য এখনো টিকে রয়েছে। এর মধ্যে আলী আমজদের ঘড়ির বয়স হয়েছে ১৪৫ বছর। এক বছর ধরে ঘড়িটি বিকল। ঘড়ির কাঁটা সচল করতে সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ নেই।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলী আমজদের ঘড়ি সিলেটবাসীর কাছে এখন ঐতিহ্যবাহী একটি স্থাপনা। অনেক পর্যটকও এখন এটি দেখতে আসেন। অথচ এক বছর ধরে ঘড়ির কাঁটা থমকে আছে। ঐতিহ্যবাহী এ ঘড়ির কাঁটা শিগগিরই সচল করা হোক, এটি আমাদের দাবি।’

নগরের কিনব্রিজ এলাকায় সুরমা নদীর পাড় আর সারদা হলের মাঝখানে শহরের ‘জিরো’ পয়েন্ট। তার ঠিক ১০০ মিটারের মধ্যেই আলী আমজদের ঘড়ির অবস্থান। কিনব্রিজ পার হয়ে শহরের উত্তর অংশের ঠিক প্রবেশমুখে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা এ ঘড়ি স্থাপিত হয় ১৮৭৪ সালে। ওই বছর তৎকালীন বড়লাট লর্ড নর্থব্রুক সিলেট সফরে এসেছিলেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান ঘড়িটি নির্মাণ করেন। নামকরণ করেন নিজের ছেলে আলী আমজদ খানের নামে। ভারতের দিল্লির চাঁদনী চক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নবাব ঘড়িটি স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছিলেন বলে গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন।

ঘড়িটির দেখভাল করার দায়িত্বে আছে সিলেট সিটি করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটি সূত্রে জানা গেছে, আলী আমজদের ঘড়ির দৈর্ঘ্য ৯ ফুট ৮ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি। নিচ থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ১৩ ফুট, ছাদ থেকে ঘড়ি অংশের উচ্চতা ৭ ফুট, ঘড়ির ওপরের অংশের উচ্চতা ৬ ফুট। মোট উচ্চতা ২৬ ফুট। ঘড়িটির ডায়ামিটার আড়াই ফুট এবং ঘড়ির কাঁটা দুই ফুট লম্বা। তখনকার সময়ে এখানকার মানুষ সাধারণ সূর্যের আলো দেখেই সময় আন্দাজ করে নিতেন। ঘড়িটি চালু হওয়ার পর সময় জানার জন্য এটিই হয়ে ওঠে অনেকের অবলম্বন।

লোহার খুঁটির ওপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির এই ঘড়ি। এই নান্দনিক স্থাপনা যে কাউকে মুগ্ধ করে। এ ঘড়ি সিলেটের প্রতীক হিসেবে এখন দেশ-বিদেশে সুপরিচিত। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা ঘড়িটি বিধ্বস্ত করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের পরে কিছুসংখ্যক প্রবাসী, আরও পরে তৎকালীন সিলেট পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এটি সচল করতে উদ্যোগী হয়। বার কয়েক সংস্কার করা হলেও নানা সময়ে ঘড়িটি অচল হয়ে পড়ত। সর্বশেষ ২০১৬ সালে সিটি করপোরেশন ঘড়িটি পুনরায় সচল করে। এরপর দীর্ঘদিন ঘড়িটি সচল ছিল। কিন্তু গত বছর পুনরায় বিকল হয়ে ঘড়ির কাঁটা থেমে গেছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঘড়িটি নানা সময়ে সচল করার উদ্যোগ নিয়েছিল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ঘড়িটি সংস্কার করে সচল করা হয়। এর ফলে পুনরায় ঘড়িটি সময় জানান দিতে থাকে। বছরখানেক আগে পুনরায় তা অচল হয়ে পড়ে। এখন আবার এটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এরই মধ্যে এই উদ্যোগ নিতে সিটি করপোরেশনের বৈদ্যুতিক শাখাকে বলা হয়েছে।