'গাঙ' ভরাট, বিপাকে হাওরবাসী

মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরে ছোট–বড় ২২টির মতো ‘গাঙ’ বা ছড়া আছে। এসব গাঙ বা ছড়া দিয়ে নৌকায় হাওরাঞ্চলের মানুষ ফসল পরিবহন করে। এসব গাঙের পাড়গুলো হয়ে ওঠে পায়ে চলার পথ।

কিন্তু দিন দিন ক্রমে ভরাট হয়ে যচ্ছে এসব ছোট–বড় গাঙ ও জলাশয়। এতে বিপাকে পড়েছেন হাওরাঞ্চলের কৃষকেরা। নৌকা চলতে না পারায় জলপথে বোরো ধান পরিবহন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে পাড়গুলোও ভেঙে পড়ায় যানবাহন তো দূরের কথা; মাথায় করে যে ধানগুলো পরিবহন করবেন কৃষকেরা, সে উপায়ও নেই।

গাঙ ও ছড়াগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুধু কৃষকেরাই নন, এই জলপথে নৌকা চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পুরো হাওরবাসীকেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হাওরাঞ্চলে যানবাহন চলাচলের রাস্তা নেই। নৌকা চলাচল করতে না পারলে মালামাল পরিবহন এবং অসুস্থ মানুষজনের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাউয়াদীঘি হাওর মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত। তবে বেশির ভাগ অংশই পড়েছে রাজনগরে। কাউয়াদীঘি হাওর বোরো ফসল ও মাছের অন্যতম জলাভূমি। শুকনো মৌসুমে কাউয়াদীঘি হাওরে লোকজন বোরো ধানের আবাদ করেন। হাওরপারের মানুষের এটাই একমাত্র ফসল। এই হাওরে ছোট–বড় মিলিয়ে ২২টি গাঙ, খাল বা ছড়া রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাছু গাঙ, দিগলা গাঙ, খইলতা গাঙ, ধলিয়ার গাঙ, মুনিয়া খাল, আখালিয়া ছড়া, করাদাইর খাল, ধানছড়া খাল, লাছ গাঙ, চিকার খাড়া খাল, লঙ্গু খাল, হাড়িকোন খাল, ভরাং খাল প্রভৃতি। বর্ষায় হাওরের পানিতে তলিয়ে যায় সবকিছু। তখন বিস্তীর্ণ হাওর এলাকার প্রায় সব জায়গাতেই নৌকা চলাচল করতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরে ভরাট হতে থাকায় এখন এসব জলাশয় দিয়ে নৌকা চলাচল করতে পারছে না। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছেন বোরো চাষিরা। নৌকা চলাচলের মতো পানির গভীরতা না থাকায় গাঙ্গের পার দিয়ে মারাত্মক কষ্ট সহ্য করে কাঁধে, মাথায় ধানের বোঝা বয়ে বাড়ি নিতে হচ্ছে কৃষকদের।

অপর দিকে এসব জলাশয়ের পাড়ও ভেঙে পড়ায় হেঁটে চলাও অনেক স্থানে কঠিন হয়ে পড়ছে। যেসব গাঙ বা খালে এখনো পানি আছে, সেখানেও লোকজনকে নৌকায় করে ঠেলে ধান নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম ভাগ গ্রামের কৃষক আবদুল আহাদ, আছমত মিয়া এবং সমছু মিয়াসহ কয়েকজন বলেন, কাউয়াদীঘি হাওরাঞ্চলে যোগাযোগের জন্য সড়ক নেই বললেই চলে। যে কারণে গাঙ ও গাঙের পাড়ই হচ্ছে তাঁদের যোগাযোগের মাধ্যম। যেমন ফসল রোপণের সময় গাঙের পাড় দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। তেমনি ধান পাকার পর বাড়িতে আনতে হয় নৌকাবোঝাই করে। কিন্তু গাঙগুলো ভরাট হওয়ার কারণে তা শুকিয়ে গেছে। এতে তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। বোরো ধানই হচ্ছে তাঁদের প্রধান জীবিকা। এই ধান দিয়েই তাঁদের সারা বছরের খোরাকি ও যাবতীয় খরচাপাতি চলে।

পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শামসুন নূর আহমদ আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাওরজুড়ে রয়েছে ছোট–বড় অনেক গাঙ। বেশির ভাগই ভরাট হয়ে গেছে।’

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, কাউয়াদীঘি হাওরে গাঙ, খাল বা ছড়ার সংখ্যা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি আছে। তবে এখানে ২২টির মতো ছোট–বড় গাঙ, খাল বা ছড়ার কথা বলা হয়।

সূত্রটি আরও জানায়, ছোট ছড়া বা খাল নিয়ে পাউবো কাজ করে না। যেগুলো বড়, সেগুলোতে কাজ করে। এ বছর কাউয়াদীঘি হাওরাঞ্চলে আখালিয়া ছড়ার ৩ দশমিক ৭০ কিলোমিটার এলাকা খনন করা হয়েছে। করাদাইর খাল খননের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। করাদাইর খালের সাড়ে ১২ কিলোমিটার আগামী শুকনো মৌসুমে খনন করা হবে।

পাউবোর মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ছোট ছড়া বা খাল নিয়ে কাজ করি না। যেগুলো বড়, সেগুলোতে কাজ করি। আখালিয়া ছড়া খনন করা হয়েছে। হাওরের ভেতর করাদাইর ভরাট হয়ে গেছে। এটি খনন করা দরকার। এটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কাউয়াদীঘি হাওরে কতটা গাঙ, ছড়া বা খাল আছে—তা জানানোর জন্য উপজেলা কমিটিকে বলা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।’