বাংলাদেশ সামগ্রিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে: গণপূর্তমন্ত্রী

কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে ইউএন-হ্যাবিটাট অ্যাসেম্বলির প্রথম অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনের সেশনে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। ছবি: সংগৃহীত
কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে ইউএন-হ্যাবিটাট অ্যাসেম্বলির প্রথম অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনের সেশনে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। ছবি: সংগৃহীত

গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। আশা করা যাচ্ছে অতি অল্প সময়ের মধ্যে সব সূচক অর্জন করে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে।’

আজ মঙ্গলবার কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত ইউএন-হ্যাবিটাট অ্যাসেম্বলির প্রথম অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনের এক সেশনে বাংলাদেশ স্টেটমেন্ট প্রদানকালে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের গতিধারার সঙ্গে সঙ্গে নগরায়ণ দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৬১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে দেশের মোট জনসংখ্যা ৫০ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৫০ মিলিয়ন হয়েছে। একই সঙ্গে শহরের জনসংখ্যা ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন হয়েছে, যা প্রায় ১৬০০ শতাংশ বৃদ্ধি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে শহরের জনসংখ্যা হবে ৬০ থেকে ৮০ মিলিয়ন। নগরে জনসংখ্যার এমন বৃদ্ধির কারণে সীমিত নাগরিক সুবিধা ও সীমিত সম্পদ দিয়ে তাদের জন্য আশ্রয়, খাদ্য, যোগাযোগব্যবস্থা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, নাগরিকসেবা ও বিনোদনসুবিধা প্রদান ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে।

গৃহায়ণমন্ত্রী বলেন, পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশ অনেকগুলো কৌশলগত নীতি গ্রহণ করেছে। এগুলো হলো রূপকল্প ২০২১, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১, জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশল ২০১০-২০২১, জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তাকৌশল, যষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, শহরের নাগরিকসুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ কর্মসূচি।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘সীমিত ভূমি, সম্পদ ও সীমিত সাধ্য নিয়ে বাংলাদেশ প্রায় ১ দশমিক ২০ মিলিয়ন বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার জনগণের জন্য আশ্রয়, রাস্তাঘাট, ব্রিজ/কালভার্ট, বৈদ্যুতিক লাইন, পয়োশোধনাগার, সৌরবাতি প্রভৃতির ব্যবস্থা করে তাদের প্রতি মানবিক সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমি স্মরণ করতে চাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যার গতিশীল নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যার পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আমাদের সেসব মর্মান্তিক ও ভয়াবহ ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। যেহেতু বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ দেশ এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক গণহত্যার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে, তাই আমাদের উদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশের দরজা খুলে দিয়েছেন। রোহিঙ্গা জনগণকে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর এই উদারতার জন্য যুক্তরাজ্যভিক্তিক চ্যানেল ফোরের এশিয়ান প্রতিনিধি জনাথন মিলার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে “মাদার অব হিউম্যানিটি” নামে আখ্যায়িত করেছেন ।’ তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুটি আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সাধ্য দিয়ে মোকাবেলা করছি । আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও রোহিঙ্গাদের জন্য সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা আজ শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু এবং এর একটি স্থায়ী সমাধান করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য পাঁচ দফা সমাধান প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন।’

কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে ২৭ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী ইউএন-হ্যাবিটাট অ্যাসেম্বলির প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ অধিবেশনে বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করছেন। উল্লেখিত অধিবেশনে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।