জাপান সব সময়ই আমার হৃদয়ের কাছাকাছি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
>

জাপানের জাতীয় দৈনিক জাপান টাইমস-এ গত সোমবার শেখ হাসিনার লেখা প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপান সফর সামনে রেখে বাল্যকাল থেকেই দেশটি নিয়ে আগ্রহ থাকার কথা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকেই তাঁর এই আগ্রহের সৃষ্টি উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘ছোটবেলা জাপানকে নিয়ে আমার বেশ আগ্রহ ছিল। আমি জাপানি চিত্রকলা, ক্যালেন্ডার, স্ট্যাম্প, পুতুল প্রভৃতি সংগ্রহ করতাম।’

জাপানের জাতীয় দৈনিক জাপান টাইমস–এ গত সোমবার প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রীর এক প্রবন্ধ থেকে এ কথা জানা যায়। প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আমার বাবার কাছ থেকেই এটা আমি পেয়েছি। বাংলাদেশকেও একদিন আরেকটি জাপান হিসেবে গড়ে তোলার তাঁর আকাঙ্ক্ষার কথা আমার জানা ছিল। জাপানে আশা এবং সম্প্রীতির এক নতুন যুগের যে সূচনা হয়েছে, এই নতুন সময় আমাদের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসুক, সম্পর্ককে আরও গভীর করে তুলুক এবং আমাদের শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ এবং উন্নত পৃথিবী গড়ে তোলায় সহায়ক হোক।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে সব সময়ই পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস এবং সহযোগিতার ভিত্তিতে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।

বাংলাদেশকে প্রথম দিকে স্বীকৃতি প্রদানকারী দেশগুলোর অন্যতম জাপান। জাপানি স্কুলশিশুরা তাদের টিফিনের অর্থ বাঁচিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশিদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জাতীয় পতাকার মধ্যেও সাদৃশ্য রয়েছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রায়ই বলতেন, জাপানের পতাকা তাঁকে সূর্যোদয়ের দেশ হিসেবে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমাদের পতাকায় সবুজের বুকে লাল সূর্য লাখো শহীদের আত্মত্যাগেরই প্রতিচ্ছবি।’

বিরোধী দলে থাকতে ১৯৯২ সালে জাপানের একটি সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে জাপানের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার প্রথম জাপান সফরের সময়ই পদ্মা এবং রূপসা সেতু নির্মাণে সহযোগিতার বিষয়ে জাপান অঙ্গীকার করে। রূপসা সেতুটি জাপানেরই তৈরি করে দেওয়া এবং পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষাটিও তারাই সম্পন্ন করে। সে সময় জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য সংসদীয় এবং বন্ধুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কমিটিও গঠন করা হয়েছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জাপানের সহায়তা বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ করে কর্ণফুলী সার কারখানা, প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁও নির্মাণ এবং বিভিন্ন বড় শহরে পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে। অন্যদিকে, জাপানপ্রবাসী বাংলাদেশিরাও সে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন।

বাংলাদেশে জাপানি উদ্যোক্তাদের ব্যবসা স্থাপনের উদ্যোগ এবং উৎসাহ আশা জোগায় বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে জাপানের ২৮০টি ফার্ম বাংলাদেশে কাজ করছে, যা গত ১০ বছরের মধ্যে ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জাপানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, জাপানের বিভিন্ন কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আসার বিষয়ে আস্থা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২২ সালে বাংলাদেশ এবং জাপান কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন করবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আস্থাশীল যে শান্তি এবং উন্নয়নে আমাদের উভয়ের মূল্যবোধ এবং অঙ্গীকার আমাদের জনগণের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।’