মেয়াদের চার বছর পর ভোট

শেরপুর
শেরপুর

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী গারোদের সংগঠন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তিন বছর মেয়াদের কমিটি কুক্ষিগত করে সাত বছর ক্ষমতায় থাকার অভিযোগ উঠেছে। তবে ভোটারদের আন্দোলন–সংগ্রামের মুখে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কাল ৩১ মে গারোদের অধিকার আদায়ের এ সংগঠনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর ও অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৭ সালে উপজেলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ‘ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ নামের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ১৯৯৯ সালে সংগঠনটির নিবন্ধন করা হয়। সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী, সংগঠন পরিচালনার জন্য ১৫ সদস্যের কার্যকরী কমিটি থাকবে। তিন বছর মেয়াদ শেষে কমিটির উদ্যোগে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হবে।

২০১৩ সালের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লুইজ নেং মিং জা, ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রাণজল দ্রং ও জেনারেল সেক্রেটারি সম্পাদক পদে লরেন্স দ্রংসহ ১৫ সদস্যের কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৫ সালে এই কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন দেওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচন না দিয়ে তাঁরা সময়ক্ষেপণ করেন। তখন নির্বাচনের দাবিতে অ্যাসোসিয়েশনের একাংশের সদস্যরা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। পরে নির্বাচনের আদেশ থাকলেও আওয়ামী লীগের একজন নেতার হস্তক্ষেপে নির্বাচনের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

আবার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা নির্বাচন চেয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি মাসের ১৩ তারিখে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ১৫টি পদে আগ্রহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন। ২২ মে যাচাই–বাছাই শেষে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৩১ মে পৌর শহরের গড়কান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুটি কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

১৫টি পদের মধ্যে ১৩ পদে একাধিক কোনো প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাঁরা নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। শুধু চেয়ারম্যান ও জেনারেল সেক্রেটারি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান কোপেন্দ্র নকরেক। তাঁর প্রতীক হচ্ছে চেয়ার। তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছাতা প্রতীক নিয়ে অঞ্জন পাঠক। আর জেনারেল সেক্রেটারি পদে হাতি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন হিরণ চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে বিশ্বজিৎ রুদ্র।

নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে বন্দনা চাম্বু গং, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে উমা রানী হাজং, কোষাধ্যক্ষ পদে লিটন হাজং, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে গলিয়াদ রেমা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে সুনীল সিংহ, নারী শিশু ও স্বাস্থ্যবিষয়ক পদে পরিমল বর্মণ, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অন্তর চাম্বু গং নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সম্মানিত সদস্য হিসেবে উমা কান্ত বিশ্বাস, সূর্য ডালু, প্রমেল রিছিল, সুমন চিরান, রনিতা কোচ ও সুকান্ত বর্মণ নির্বাচিত হয়েছেন।

নির্বাচন পরিচালনার জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে আছেন সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক। এ ছাড়া আছেন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজিলা তুন নেছা ও নির্বাচন কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন। ৩১ মে চেয়ারম্যান ও জেনারেল সেক্রেটারি পদের ভোট গণনা শেষে তিন বছরের জন্য ১৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির নাম ঘোষণা করা হবে।

ভোটার ক্লোডিয়া নকরেক কেয়া বলেন, ‘ক্ষমতার প্রভাবে সাবেক কমিটি তিন বছরের জায়গায় সাত বছর জোর করে দায়িত্বে ছিল। এ নিয়ে নির্বাচনের দাবিতে আমরা লড়াই করেছি। অবশেষ আমাদের জয় হয়েছে। ৩১ মে চেয়ারম্যান ও জেলারেল সেক্রেটারি পদে নির্বাচন হবে। ভোটাররা যাকে পছন্দ করবেন, তাঁকে নির্বাচিত করবেন।’

নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ও পোড়াগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বন্দনা চাম্বু গং বলেন, সাবেক কমিটির মেয়াদ ২০১৫ সালে শেষ হয়। কিন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতার কারণে বিনা নির্বাচনে ওই কমিটি আরও চার বছর দায়িত্বে ছিল। আন্দোলনের ফলে এখন নির্বাচন হচ্ছে। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভালোমন্দ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জনগণই ভালো বোঝেন।

অভিযোগ সম্পর্কে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রাণজল দ্রং বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে রেজল্যুশনের মাধ্যমে আমরা আরও চার বছর দায়িত্ব পালন করেছি। এখানে ক্ষমতার থাকার জন্য কোনো টালবাহানা করা হয়নি। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়।’