দুস্থদের কার্ড রেখে চাল দিলেন না ইউপি সদস্য

কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বেশ কয়েকজন দুস্থ নারীর কাছ থেকে ভিজিএফ কার্ড রেখে চাল না দিয়েই বিদায় করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার উপজেলার গোবরিয়া আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের চালবঞ্চিত নারীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে গিয়ে এ অভিযোগ করেন।

ইউএনও কাউসার আজিজ বলেন, অভিযোগ পেয়ে প্রতিকারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে তখনই সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবছর ঈদের আগমুহূর্তে ভিজিএফ কার্ডধারীদের ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। এবার দেওয়া হচ্ছে ১৫ কেজি করে। কার্ডধারী হন দুস্থ নারী। ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে কার্ড বিতরণ হয়ে থাকে। গোবরিয়া আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নে কার্ড দেওয়া হয়েছে ৯০০ নারীকে। তাঁদের চাল দিতে ইউনিয়ন পরিষদ বরাদ্দ পেয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ কেজি। গোবরিয়া আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে চাল বিতরণের সর্বশেষ তারিখ ছিল মঙ্গলবার।

ভুক্তভোগীরা জানান, এ দিন চাল বিতরণের সময় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। জাকিরের কাছ থেকে কার্ড পেয়ে চাল নিতে আসেন অনেকে। জাকির তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ডেকে তাঁর কাছে নেন। চাল দেবেন বলে কার্ড নিজের হাতে নেন। তারপর কার্ডধারীদের মাস্টাররোল খাতায় স্বাক্ষর করতে বলেন। জাকিরের নির্দেশমতো টিপসহি দেন। কার্ড হাতে নিয়ে ও টিপ সই রাখার পর জাকির তাঁদের জানিয়ে দেন আজ নয়, পরে চাল দেওয়া হবে। এ নিয়ে জাকিরের সঙ্গে তাঁদের কথা-কাটাকাটি হয়। এরপরও জাকির চাল দিতে রাজি হননি। তাঁরা প্রথমে সমস্যাটি জানান ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য মাহমুদা পারভীনকে। তাঁর মাধ্যমে ভুক্তভোগীরা যোগাযোগ করেন চেয়ারম্যানের সঙ্গে। সব শুনে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তাঁদের বিদায় করে দেন চেয়ারম্যান। কিন্তু তাঁরা চেয়ারম্যানের কথায় আস্থা রাখতে পারেননি। শেষে প্রতিকার পেতে বিকেলে যান ইউএনওর কাছে।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে ইউনিয়নটির পূর্ব গোবরিয়া গ্রামের কল্পনা বেগম, রহিমা বেগম, ক্বারী মা বেগম, শরিফা বেগম ও রওশন আরা বেগম রয়েছেন। শরিফা বেগম বলেন, ‘জাকির মেম্বার আমরার পরিচিত। নরম কইরা কওয়ায় সরল বিশ্বাসে কার্ড দিয়া দিছি। টিপসহিও দিছি। ও-মা সই দেওয়ার পর দেহি এই জাকির আর হে জাকির নাই। গরম কইরা কথা কওয়া শুরু করছে।’ কল্পনা বেগম বলেন, ‘রোজার প্রথম দিন থাইক্কা ভিজিএফের চাইল পাওয়ার আশায় আছি। কোনো কারণে যদি না পাই, তাহলে আমার আর ঈদ করা হইব না।’

জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মো. আব্বাছ উদ্দিন দাবি করেন, যাঁদের কার্ড রেখে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা কৌশলে দুই জায়গা থেকে কার্ড নিয়েছিলেন। এ কারণে এমনটি হয়েছে বলে তিনি জেনেছেন। তবে চাল না দিয়ে স্বাক্ষর রাখা ঠিক হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে কথা বলতে ইউপি সদস্য জাকির হোসেনের ফোনে কল করেন এ প্রতিবেদক। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ও ভিজিএফ ইস্যু নিয়ে কথা বলতে চাইলেই তিনি ফোন রেখে দেন। পরে বারবার রিং করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

দুই জায়গা থেকে কার্ড নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন ভুক্তভোগী নারীরা।