মজুরি-ঈদ বোনাস এসেছে, উল্লসিত খুলনার পাটকলশ্রমিকেরা

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

একজন মানুষের জীবনে ২০ হাজার টাকার কতটা গুরুত্ব আছে? সমাজের বিত্তশালীদের কাছে এটি হয়তো হাতের ময়লা। কিন্তু হাবিবুর রহমানের মতো একজন শ্রমিক যিনি তিন মাস ধরে প্রাপ্য মজুরি পান না, তাঁর কাছে এ টাকা তো মহার্ঘ্য। আজ খুলনার খালিশপুরে একটি এটিএম বুথ থেকে ২০ হাজার টাকা তোলার পর কেঁদে ফেলেন এই পঞ্চাশোর্ধ। টাকাটা তাঁর কতটা জরুরি ছিল, বারবার বলছেন সেই কথা। খালিশপুরের প্লাটিনাম জুট মিলের স্থায়ী শ্রমিক তিনি। তাঁর ১২ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া ছিল। এর মধ্যে ১০ সপ্তাহের মজুরি আর ঈদের একটি বোনাস হিসেবে ২৫ হাজার টাকা পেয়েছেন তিনি।

এবার সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শ্রমিকদের ব্যাংকের হিসাবে সরাসরি চলে গেছে মজুরি ও বোনাস। কারণ হাবিবুরদের মতো অনেক শ্রমিকের রক্ত পানি করা মজুরি অনেক সময় তাঁদের হাতে পৌঁছাত না। সরাসরি নিজের টাকা নিজে তুলতে পেরে খুশি হাবিবুর।

খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জুট মিলে বকেয়া মজুরি ও ঈদের বোনাসের দাবি নিয়ে কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করছিলেন পাটকলশ্রমিকেরা। শ্রমিকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গত সোমবার জরুরি বিবেচনায় ১৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। তবে এই অর্থ শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে চেকের মাধ্যমে দিতে হবে বলেও শর্ত আরোপ করে দেওয়া হয়েছে। 

বিজেএমসির আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে জানা গেছে, খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলের জন্য ৩৪ কোটি ২৬ লাখ টাকার মজুরি এবং ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকার বোনাস দেওয়া হয়েছে। বিজেএমসি থেকে সরাসরি এই টাকা শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাচ্ছে। খুলনার খালিশপুর, দৌলতপুর ও কার্পেটিং জুট মিলে সাত সপ্তাহের মজুরি এবং ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, জেজেআই, ইস্টার্ন ও আলিম জুট মিলে ১০ সপ্তাহের মজুরি দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সব মিলেই শ্রমিকদের এক সপ্তাহের ঈদ বোনাস দেওয়া হচ্ছে।

দীর্ঘ আন্দোলন–সংগ্রামের পর কাঙ্ক্ষিত মজুরি পেয়েছেন খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার পর থেকে শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো শুরু হয়।

কারখানাগুলোতে সর্বনিম্ন ৭ সপ্তাহ থেকে ১০ সপ্তাহের মজুরি এবং একটি ঈদ বোনাস দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর বকেয়া মজুরি পেয়ে আনন্দে ভাসছে খালিশপুর শিল্পাঞ্চল। এই কয় মাসে মজুরি না পেয়ে ধার করেছেন অনেক শ্রমিক। পাওনাদারদের সেসব দাবি মেটাবেন অনেকেই। এই অর্থ দিয়ে ঈদের কেনাকাটাও করবেন তাঁরা।

শ্রমিক হাবিবুর রহমান বলছিলেন, টাকা নিয়ে আগে পাওনাদারদের ১২ হাজার টাকা পরিশোধ করবেন। এরপর পরিবারের জন্য কেনাকাটা ও ঈদের বাজার করবেন।

ক্রিসেন্ট জুট মিল সিবিএ সভাপতি মো. মুরাদ হোসেন জানান, বিকেল সাড়ে চারটার পর থেকে অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকা শুরু হয়েছে। ৩০ হাজার শ্রমিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগবে। এ জন্য সব শ্রমিক এখনো টাকা তুলতে পারেননি। সব শ্রমিকই এখন খুশি। আগামী সোমবার আরও দুই সপ্তাহের মজুরি দেওয়া হতে পারে।

প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমীন বলেন, এক ঘণ্টা আগেও শ্রমিকেরা মুখভার করে বসেছিলেন। এখন সবাই আনন্দিত। দ্রুত মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করা হলে শ্রমিকদের মধ্যে আর কোনো ক্ষোভ থাকবে না।

বিজেএমসির আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯টি পাটকলের জন্য ৪৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। পুরো টাকাই শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার আগেই সবার অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাবে।