টেকনাফে 'বন্দুকযুদ্ধে' ইয়াবার হোতা সাইফুল নিহত

সাইফুল করিম।
সাইফুল করিম।

টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসার অন্যতম হোতা সাইফুল করিম (৪৫) পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমানাপ্রাচীরের শেষ প্রান্তে নাফ নদীর তীরে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশের দাবি, সাইফুল করিম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ গোয়েন্দা সংস্থার মাদক–সংক্রান্ত একাধিক তালিকায় শীর্ষে ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশে প্রথম ইয়াবার চালান আনা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় সাতটি মামলা রয়েছে।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে ১ লাখ ইয়াবা বড়ি, ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র (এলজি), শর্টগানের ৪২টি তাজা কার্তুজ ও ৩৩টি কার্তুজের খোসা জব্দ করা হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে পুলিশের একজন এসআই ও দুজন কনস্টেবল আহত হয়েছেন।

সাইফুল করিমের বাড়ি টেকনাফ পৌরসভার শীলবুনিয়া পাড়ায়।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ প্রথম আলোকে জানান, দীর্ঘ ৯ মাস আত্মগোপনের পর কয়েক দিন আগে সাইফুল করিম বিদেশ থেকে টেকনাফ আসেন। এ সময় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল জানান, কয়েক দিন আগে মিয়ানমার থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইয়াবার বড় একটি চালান এনেছেন। সেই চালান টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমানাপ্রাচীরের শেষ প্রান্তে নাফ নদীর পাড়ে মজুত করেছেন। সাইফুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ইয়াবা উদ্ধারের জন্য তাঁকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে অস্ত্রধারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকেন। এ সময় অস্ত্রধারীদের গুলিতে টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাসেল আহমেদ, কনস্টেবল ইমাম হোসেন ও মো. সোলাইমান আহত হন। এরপর আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়ে। গোলাগুলিতে সাইফুল করিম গুলিবিদ্ধ হন। একপর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি করতে করতে পাশের জঙ্গলে আত্মগোপন করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ সাইফুল করিমকে উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রণয় রুদ্র বলেন, গুলিবিদ্ধ সাইফুল করিমকে দিবাগত রাত দেড়টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। তাঁর শরীরে চারটি গুলির দাগ ছিল। একটি বুকে, তিনটি পেটে।

পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের জন্য সাইফুলের মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

এর আগে গত ৩ মে টেকনাফ থানার পুলিশ ১০ হাজার ইয়াবা বড়ি, ৪টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ নিজ বাড়ি থেকে সাইফুল করিমের দুই ছোট ভাই মাহবুবুল করিম ও রাশেদুল করিমকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা বর্তমানে কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দী।

২০০৩ সালের দিকে সাইফুল করিম টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা শুরু করেন। একাধিকবার তিনি সেরা করদাতার (সিআইপি) খেতাব অর্জন করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা, ৩০টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ১০২ জন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করলেও সাইফুল তখন বিদেশে আত্মগোপন করেন। তাঁর পরিবারের দাবি, টেকনাফের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি আত্মসমর্পণের সুযোগের কথা দিয়ে কয়েক দিন আগে সাইফুল করিমকে মিয়ানমার থেকে টেকনাফে নিয়ে আসেন।

গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় ‘আত্মসমর্পণ করতে চান ইয়াবার মূল হোতা সাইফুল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

গত বছর মে মাসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তালিকায় ৭৩ শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীর মধ্যে সাইফুল করিমের নাম ছিল ২ নম্বরে। ১ নম্বরে রয়েছে টেকনাফের বিতর্কিত সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির নাম। ওই তালিকায় বদির ছোট ভাই মুজিবুর রহমান, টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আলমসহ অনেকের নাম রয়েছে।

বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক পাচারকারী নিহত
গতকাল রাত ১১টার দিকে টেকনাফে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে একজন মাদক পাচারকারী নিহত হয়েছেন। তবে নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। এ ঘটনায় দুইজন বিজিবির সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। তাঁরা হলেন ল্যান্স নায়েক মো. জহিরুল ইসলাম ও সিপাহি জাব্বিরুল।

টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়সল হাসান খান বলেন, ইয়াবার একটি বড় চালান মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসতে পারে—এমন তথ্যের ভিত্তিতে টেকনাফ বিওপির বিশেষ টহল দল গফুর প্রজেক্ট এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় বিজিবি সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে নাফ নদী থেকে গুলি চালান মাদক ব্যবসায়ীরা। আত্মরক্ষায় বিজিবিও পাল্টা গুলি চালায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে ১ লাখ ১০ হাজার ইয়াবা, একটি ধারালো কিরিচসহ একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে ওই ব্যক্তিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আহত বিজিবি সদস্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, মাদক ব্যবসায়ী যে–ই হোক, ছাড় নেই। তাঁকে আত্মসমর্পণ করে হয় সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে হবে, নয়তো শেষ পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

গত বছরের ৪ মে থেকে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়। এ নিয়ে র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ ও এলাকায় মাদকের প্রভাব বিস্তারের ঘটনায় কক্সবাজার জেলায় ১০৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নারীসহ ২১ রোহিঙ্গা নাগরিক রয়েছেন। টেকনাফে ৬৫ ও উখিয়ায় ২ জন নিহত হন।

আরও পড়ুন: