কোটি টাকার ওয়াকওয়েতে ধস

ছয় কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত নরসুন্দা নদীতীরের ওয়াকওয়ে ধসে পড়েছে। গতকাল কিশোরগঞ্জ শহরের হাসপাতাল বটতলা মোড় এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
ছয় কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত নরসুন্দা নদীতীরের ওয়াকওয়ে ধসে পড়েছে। গতকাল কিশোরগঞ্জ শহরের হাসপাতাল বটতলা মোড় এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জ শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদীতীরে নির্মিত হাঁটার রাস্তা (ওয়াকওয়ে) কয়েকটি জায়গায় ধসে পড়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, মাটির মান খারাপ হওয়ায় ওই ওয়াকওয়ে টেকানো যাচ্ছে না। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিম্নমানের কাজ হওয়ায় ছয় কোটি টাকার এই কাজ টিকছে না।

জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফ আলী খান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কিশোরগঞ্জে যোগদানের আগেই নরসুন্দা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাই কী কারণে কিছু এলাকায় ওয়াকওয়ের এ দুরবস্থা তা সঠিকভাবে বলতে পারছেন না। তবে এটা জানতে পেরেছেন, মাটির মান ভালো ছিল না। মাটি সরে যাওয়ায় ওয়াকওয়ে ধসে পড়তে শুরু করে। ধসে পড়া স্থানগুলো পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ইতিমধ্যে শহরের পাগলা মসজিদের সামনে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। শহরের হাসপাতাল বটতলা মোড়সহ অন্যান্য স্থানের কাজ দ্রুতই শুরু হবে।

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের নাম ‘কিশোরগঞ্জ জেলার নরসুন্দা নদী পুনর্বাসন ও পৌরসভা–সংলগ্ন এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প’। মোট বরাদ্দ ছিল ১১০ কোটি টাকা। এই টাকায় নরসুন্দা নদীর ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নকাজ হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে বড় ছিল হোসেনপুর উপজেলার কাউনা এলাকা থেকে সদর উপজেলার নীলগঞ্জ পর্যন্ত ও শহরের মনীপুর ঘাট থেকে যশোদল এলাকার সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত নদী খনন। অন্যান্য কাজের মধ্যে ছিল নদীর ওই এলাকায়  তিনটি পুরোনো সেতুর সংস্কার, ছয়টি নতুন বড় সেতু ও চারটি নতুন পদচারী–সেতু  নির্মাণ, নদীর পাড়ে ৬ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ২০ কিলোমিটার রাস্তা, ৮টি ঘাট ও দুটি বিনোদন পার্ক, একটি ওয়াচ টাওয়ার, মুক্তমঞ্চ, ফুটপাতের বিদ্যুতায়ন ও পথচারী শেড নির্মাণসহ নদীপাড়ের সৌন্দর্যবর্ধন।

২০১২ সালের ২২ নভেম্বর তৎকালীন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বৃহৎ এ প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন। দরপত্রের কার্যাদেশ মোতাবেক, প্রকল্পের কাজের মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর। প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেকেই ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ ওঠে। স্থানীয় জনসাধারণসহ বিভিন্ন সংগঠন এর বিরুদ্ধে জন্য সভা-সমাবেশসহ নানা ধরনের আন্দোলন শুরু করে।

আন্দোলনকারীদের ভাষ্যমতে, নরসুন্দা নদীর দুই পাড়ে সোয়া ছয় কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ছিল সাড়ে ছয় কোটি টাকা। এই টাকায় নদীর উত্তর পাশে শহরের গাইটাল মরাখলা থেকে একরামপুর সেতু পর্যন্ত এবং দক্ষিণ পাশে বড় বাজার সেতু থেকে মরাখলা পর্যন্ত ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। ওয়াকওয়ের কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালের শেষের দিকে। কাজ শুরুর কমবেশি তিন মাসের মাথায় তাতে ধস শুরু হয়। কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু যেসব এলাকা ধসে পড়ে, তা আর মেরামত করে দেওয়া হয়নি।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা শহরের হাসপাতাল বটতলা এলাকায় ওয়াকওয়ে ভেঙে কাত হয়ে আছে। সেখানে প্রায় ৩০০ গজ এলাকাজুড়ে ভাঙন চোখে পড়ে। আরও কয়েকটি এলাকায় ওয়াকওয়ের একই অবস্থা। বটতলা এলাকার ব্যবসায়ী দিদারুল ইসলাম বলেন, এখানে ওয়াকওয়ে নির্মাণের পরপরই ভাঙন দেখা দিয়েছিল। প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গেছে, অথচ এই ভাঙন মেরামত করা হয়নি। এখানে পথচারীরা প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন বলে জানান তিনি।