তিন বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি, পরিবার হতাশ

নাজিমউদ্দিন সামাদ
নাজিমউদ্দিন সামাদ

পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নাজিমউদ্দিন সামাদ হত্যা মামলার তদন্ত তিন বছরেও শেষ হয়নি। মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগ বলছে, পুলিশ জানতে পেরেছে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম (পুরোনো নাম আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। মামলার তদন্ত এখন শেষ পর্যায়ে।

২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল রাতে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানার একরামপুর মোড়ে ঋষিকেশ দাশ রোডে দুর্বৃত্তরা নাজিমউদ্দিনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সন্ধ্যাকালীন স্নাতকোত্তরের ছাত্র ছিলেন। নাজিমউদ্দিন সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ছিলেন। এই হত্যার ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় করা মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে ওই থানার পুলিশ। পরে মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগে (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়। পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বর্তমানে মামলাটি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম বিভাগ তদন্ত করছে। নিহত নাজিমউদ্দিন আগে সিলেটের জালালাবাদের আম্বরখানা এলাকায় থাকতেন। হত্যার আগে ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট সেখানে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধাওয়া করেছিল দুর্বৃত্তরা।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, হত্যাকাণ্ডে আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান চাকরিচ্যুত সেনাবাহিনীর মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে জিয়াসহ ১১ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। অন্যরা হলেন জঙ্গিনেতা সেলিম ওরফে আল হাদী, রাশেদুন্নবী ভূঁইয়া ওরফে টিপু, মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সায়মন, আরাফাত রহমান ওরফে শামস, শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জায়েদ, আকরাম ওরফে আদনান, তাহসিন ওরফে তাহের, সাব্বির, হাসান ও আকাশ ওরফে অনীক। এঁদের মধ্যে পুলিশ রাশেদুন্নবী ভূঁইয়া, মোজাম্মেল হোসেন, আরাফাত রহমান ও শেখ আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে। অন্যদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। রাশেদুন্নবী ও শেখ আবদুল্লাহ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তার চার জঙ্গি বর্তমানে কারাগারে আছেন। হত্যাকাণ্ডের সমন্বয়ক জঙ্গিনেতা সেলিম ওরফে হাদী ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকারী হাসানের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা জোগাড় ও হত্যায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের জন্য মামলার তদন্ত শেষ করতে সময় লাগছে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ও মূল পরিকল্পনাকারী সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হককেও গ্রেপ্তার করা যায়নি।

>

নাজিমউদ্দিন হত্যা
আনসার আল ইসলামের ১১ জঙ্গির সম্পৃক্ততার অভিযোগ
চার জঙ্গি গ্রেপ্তার
দুজনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী নাজিমউদ্দিন আগে সিলেটের জালালাবাদের আম্বরখানায় থাকতেন
হত্যার আগে ২০১৫ সালে তাঁকে ধাওয়া করেছিল দুর্বৃত্তরা

হত্যাকাণ্ডের ছয় দিন পর পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থেকে ঈদী আমিন ও বি এম মুজিবুর রহমান নামে আনসার আল ইসলামের দুই সদস্যকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, জঙ্গিনেতা জিয়ার নির্দেশ ও পরিকল্পনায় এবং সেলিমের সমন্বয়ে আনসার আল ইসলামের সদস্যরা নাজিমউদ্দিনকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। হত্যার আগে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও নাজিমউদ্দিনের গতিবিধি অনুসরণ করেন জঙ্গি সায়মন, শেখ আবদুল্লাহ, আকরাম ও হাসান। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন আরাফাত, রাশেদুন্নবী ভূঁইয়া, আরাফাত ও আকাশ।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, নাজিমউদ্দিন হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। তদন্ত শেষে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এত দিনেও মামলার অভিযোগপত্র না হওয়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন নাজিমউদ্দিনের ফুফাতো ভাই সাদেক আহমদ আজাদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নাজিমের তিন ভাই-ই লন্ডনপ্রবাসী। একমাত্র ছোট বোন নাসিমা বেগম সিলেটের কেরানীবাজার গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধা মাকে দেখাশোনা করতেন। গত বছরে নাসিমার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু নাজিমের শোকে, রোগে ভুগে নাসিমা গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে মারা যান।