বর্জ্য রপ্তানিতে ক্ষুব্ধ মালয়েশিয়া, তদন্তের আশ্বাস পরিবেশমন্ত্রীর

নিষিদ্ধ বর্জ্য রপ্তানি নিয়ে মালয়েশিয়ার সরকারের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রশ্নের জবাবে পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর জানা নেই। তবে মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে দেখা হবে। আইনানুগ দরকারি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া অভিযোগ করেছে, অবৈধ বর্জ্য প্রেরণকারী বিশ্বের অন্য আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশ থেকে সে দেশে অন্যান্য উপকরণের মধ্যে কমপ্যাক্ট ডিস্ক (সিডি) রয়েছে। বৈধ না হওয়ার কারণে এই বর্জ্য তারা ফেরত পাঠাবে।

গত ২৯ মে মালয়েশিয়ার দ্য স্টার অনলাইনের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ কথিতমতে সবচেয়ে হতাশাব্যঞ্জক। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের বর্জ্যের কন্টেইনারে এমন বর্জ্যের সন্ধান মিলেছে, যা তাদের অনুমান বাংলাদেশের নিজের নয়। উন্নত বিশ্ব থেকে বর্জ্য আমদানি করার পরে সেই বর্জ্য বাংলাদেশ রিসাইক্লিংয়ের জন্য মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছে। মিডিয়া ইঙ্গিত দিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে এর আগেও অবৈধ বর্জ্য পাঠানো হয়েছে। মিডিয়া তাদের দেশে অবৈধ বর্জ্য প্রেরণকারী দেশগুলোকে ‘ট্র্যাশ ট্রেইটর্স’ বা ‘বর্জ্য বিশ্বাসঘাতক’ বলেও চিহ্নিত করেছে। একটি মিডিয়া প্রতিবেদনের ইন্ট্রোতে (সূচনায়) বলা হয়েছে, ‘এমনকি বাংলাদেশ নামের দেশটিও মালয়েশিয়ায় অবৈধ বর্জ্য রপ্তানি করেছে।’ ২৮ মে প্রথম রয়টার্স এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ৩০ মে বিকেলে এ বিষয়ে সরকারি মহলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বিষয়টি সম্পর্কে তখন পর্যন্ত অবগত নন বলেই প্রতীয়মান হয়েছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বিষয়টি তাঁদের নজরে আসেনি বলে জানান। এমনকি অতিরিক্ত মহাপরিচালক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ফোন নম্বর দেন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ওই কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন, মালয়েশিয়ার ঘটনা বা সিডি রপ্তানির কোনো তথ্য তাঁর জানা নেই।

গত ২৯ মে মালয়েশিয়ার পরিবেশমন্ত্রী মিজ নিজে উপস্থিত থেকে অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, জাপান ও চীন থেকে আসা বর্জ্য বোঝাই মোট নয়টি বড় কন্টেইনার সাংবাদিকদের দেখান। এরপর টোকিও সফরে গিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ গত সপ্তাহান্তে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, মালয়েশিয়া উন্নত বিশ্বের বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হতে পারে না।

বাংলাদেশ প্লেট ফেকস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএফমিইএ) সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, ‘মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ আমি সংবাদমাধ্যমে দেখেছি। কিন্তু কমপ্যাক্ট ডিস্ক বিষয়ে যে অভিযোগ এসেছে সেটা বিস্ময়কর। এখানে আমদানি বা রপ্তানিকারকের কোনো একটি তরফে বিচ্ছিন্নভাবে কোনো একটি অসঙ্গতি ঘটে থাকতে পারে। কারণ, সাধারণ বিবেচনায় উন্নত বিশ্ব থেকে বাংলাদেশে বর্জ্য আমদানি করার পরে আবার তা রিসাইক্লিংয়ের জন্য মালয়েশিয়ায় পাঠাতে হলে তা লাভজনক হওয়ার কারণ নেই। উপরন্তু পেনড্রাইভের মতো প্রযুক্তি আসার পরে বাংলাদেশ এত বেশি পরিমাণ সিডি ব্যবহারকারী দেশ নয় যে তাকে তা রপ্তানি করতে হবে। সুতরাং এখানে সত্যি কী ঘটেছে তার দ্রুত তদন্তের দাবি রাখে।’


মালয়েশীয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চীন থেকে এসেছে প্লাস্টিক ব্যাগ, ফ্রান্স থেকে আসা বর্জ্য ছিল সেখানকার একটি নামকরা সুপার মার্কেটের। সৌদি আরব থেকে এসেছিল নোংরা প্লাস্টিক কাপ, অস্ট্রেলিয়ার পাঠানো বর্জ্যের মধ্যে ছিল ডেইরি মিল্কের কার্টন, যার মধ্যে কয়েকটিতে পোকা ছিল। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কন্টেইনারের মধ্যে ছিল ই-বর্জ্য, বিশেষ করে ব্যবহৃত চার্জিংয়ের তার এবং ল্যাপটপ চার্জার। জাপান থেকে আসা বর্জ্যের মোড়কগুলো ছিল সুন্দরভাবে প্যাকেটজাত করা। সেগুলোতে ভাঙা চেয়ার এবং ফ্যান ছিল। কানাডা থেকে নোংরা প্লাস্টিকের ব্যাগ।


যুক্তরাজ্য থেকে আসা বর্জ্যের মধ্যে ছিল রাবার দ্বারা আবদ্ধ তামার তার। তামার বর্জ্য দেশটিতে অনুমোদিত হলেও রাবার নয়।


মালয়েশীয় পরিবেশমন্ত্রী মিজ ইয়েও বি ইন বলেন, ‘ঘটনা জেনে আমি হতবাক হয়েছি। কারণ, আমদানি করা কন্টেইনারগুলোর সামনের দিকে বৈধ বর্জ্য আর তার ভেতরে পাঠানো হয়েছে অবৈধ বর্জ্য।’ মন্ত্রী বলেন, ‘কমপ্যাক্ট ডিস্ক পাঠানো বৈধ নয়। কারণ, তা দেশে আমদানি করার অনুমতি নেই। আমরা এসব ফেরত পাঠাতে চাই।’