বেতনের দাবি কর্মকর্তাদের
খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের কর্মকর্তাদের বেতন বকেয়া রয়েছে পাঁচ মাসের। গত জানুয়ারি থেকে তাঁরা কোনো বেতন পাননি। এ কারণে ঈদের আগে বকেয়া বেতন ও ভাতা প্রদানের দাবিতে নিজ নিজ কারখানার প্রকল্পপ্রধানের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলোর প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করে রাখেন কর্মকর্তারা। পরে কারখানার নিজ তহবিল থেকে দুই মাসের বেতন ও উৎসব ভাতা প্রদানের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন তাঁরা। আগামীকাল সোমবার কর্মকর্তাদের ওই পাওনা পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
পাটকলগুলো সূত্রে জানা গেছে, বকেয়া বেতন, মজুরি ও উৎসব ভাতার দাবিতে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাটকলশ্রমিকেরা আন্দোলন করেন। গত ৫ মে দুপুর থেকে খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি পাটকলে কর্মবিরতি শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৩ মে থেকে সারা দেশের ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে ওই ধর্মঘট ছড়িয়ে পড়ে। ২১ মে খুলনা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিন শর্তে শ্রমিকনেতারা এক সপ্তাহের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেন। পরে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে শ্রমিকদের জন্য ১৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে শ্রমিক ও কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা শুরু হয়। তবে কর্মকর্তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, খালিশপুর, দৌলতপুর, ইস্টার্ন, আলিম এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলের কর্মকর্তারা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন।
বাংলাদেশ পাটকল কর্মকর্তা সমিতির খুলনা অঞ্চলের সভাপতি নন্দন দাস বলেন, খুলনার নয়টি পাটকলে ৪৬৯ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। কর্মকর্তাদের পাঁচ মাসের বেতন ও উৎসব ভাতা বকেয়া রয়েছে। অথচ ঈদের আগে শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি ও বেতনসহ উৎসব ভাতা প্রদান করা হলেও বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) থেকে কর্মকর্তাদের বেতন ও বোনাস প্রদানের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা নিজ নিজ কারখানার প্রকল্পপ্রধানের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কারখানার কর্মকর্তাদের দুই মাসের বেতন ও উৎসব ভাতা প্রদানের আশ্বাস দেন প্রকল্পপ্রধানেরা। আর ওই আশ্বাসের ভিত্তিতে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। সোমবার কর্মকর্তাদের ওই পাওনা পরিশোধ করা হবে।
স্টার জুট মিলের প্রকল্পপ্রধান মো. শাওন মাহমুদ বলেন, কর্মকর্তাদের পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। একই সঙ্গে উৎসব ভাতাও বকেয়া। বিজেএমসি থেকে প্রতিবার শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনার সঙ্গে কর্মকর্তাদের পাওনাও পাঠানো হয়। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত কর্মকর্তাদের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। ঈদের আগে বকেয়া বেতন ও উৎসব ভাতা না পাওয়ার আশঙ্কা থেকে কর্মকর্তারা তাঁর কার্যালয় ঘেরাও করেন। পরে কারখানার নিজস্ব ফান্ড থেকে তাঁদের দুই মাসের বেতন ও উৎসব ভাতা প্রদানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিজেএমসি খুলনার আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, খুলনা অঞ্চলের নয়টি পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ করা হলেও কর্মকর্তাদের বেতন ও বোনাসের বিষয়ে বিজেএমসি থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এ কারণে কর্মকর্তারা নিজ নিজ কারখানার প্রকল্পপ্রধানের কার্যালয় ঘেরাও করেন। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কারখানার তহবিল থেকে দুই মাসের বেতন ও উৎসব ভাতা দেওয়া হবে।