রেহা-রাহির ঈদযাত্রা

কী নাম তোমাদের, মামণি?

‘আমার নাম রেহা, ওর নাম রাহি। আমরা যমজ বোন।’
কোথায় যাচ্ছ তোমরা?
হাসি দিয়ে রেহা বলল, ‘নানা বাড়ি যাচ্ছি।’

রেহার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে রাহি বলল, ‘আমরা নানা বাড়ি যাচ্ছি, আবার দাদুর বাড়িও যাচ্ছি। নানা-দাদুর বাড়ি একই জায়গায়।’
মামণি, কত দিন পরে যাচ্ছ গ্রামের বাড়ি?
রেহা বলল, ‘অনেক দিন পরে যাচ্ছি।’
রাহি বলল, ‘অনেক দিন পর বলতে এক বছর পর গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি।’
রেহা আর রাহি উল্লাস করে বলল, ‘ঈদে অনেক মজা হবে। নানির সঙ্গে দেখা হবে। খালামণির সঙ্গে দেখা হবে।’

রেহা আর রাহির সঙ্গে দেখা হলো আজ রোববার কমলাপুর রেলস্টেশনে। মা-বাবার সঙ্গে যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে করে যাচ্ছে জামালপুরে গ্রামের বাড়িতে। ওরা থাকে রাজধানীর আশকোনায়। রেহা-রাহির মা লিজা আক্তার, বাবা রাশিদুল ইসলাম। বাবা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

রেহা-রাহির বয়স এখন ছয় বছর। আশকোনার একটি কিন্ডারগার্টেনে নার্সারিতে তারা লেখাপড়া করে। তাদের ছোট্ট একটা ভাই আছে। নাম তার ছায়া। বয়স এক বছর। ছায়া তখন তার মায়ের কোলে ঘুমাচ্ছিল। রেহা-রাহি বসে ছিল ট্রেনের ঠিক জানালার ধারে।
তাদের সামনে দিয়ে তখন প্ল্যাটফর্মে আরেকটা ট্রেন এসে থামে।
তখন রেহা রাহির মন খুশিতে নেচে ওঠে।
দুই বোন ছড়া বলতে শুরু করে...
‘ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে
রাত দুপুরে অই।
ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে
ট্রেনের বাড়ি কই ?’

মামণি ট্রেনে করে বাড়ি ফেরা খুব আনন্দের, তাই না?
রেহা বলল, ‘ট্রেনে বাড়ি যেতে অনেক ভালো লাগে, অনেক।’
রেহার কথা শেষ না হতে রাহি হাসিমুখে বলল, ‘ট্রেনে করে বাড়ি যাওয়ার সময় কত কিছু দেখা যায়। কত গাছ, কত ঘর বাড়ি, কত কিছু দেখা যায়। অনেক ভালো লাগে আমাদের।’

রেহা আর রাহির পরনে গোলাপি রঙের ফ্রক। চুলের কাটিং একই রকমের। কথা বলার ধরনও এক।

রেহা ও রাহি, যমজ বোন। ছবি: আসাদুজ্জামান
রেহা ও রাহি, যমজ বোন। ছবি: আসাদুজ্জামান

এবার ঈদে কী কী কিনেছ, মামণি?
রেহা বলল, ‘অনেক সুন্দর একটা জামা কিনেছি। ঈদের দিন সকালে গোসল করে পরব। তারপর ঘুরতে বের হব।’
সঙ্গে সঙ্গে রাহি বলল, ‘আমাদের দুই বোনের একই রকম জামা। ঈদের দিন একসঙ্গে আমরা ঘুরতে যাব। মিঠাই কিনব। কত মজা হবে।’
রেহা-রাহির স্কুল এখন ছুটি। মা-বাবা তাদের আগেই জানিয়ে ছিল, ঈদে তারা গ্রামের বাড়িতে যাবে। বাড়িতে যাওয়ার খবর শোনার পর থেকে রেহা-রাহির মন কেমন আনন্দে নেচে ওঠে?
তাদের মা লিজা বললেন, ‘গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রেহা রাহি উন্মুখ হয়ে থাকে।’

দাদু-নানা বাড়িতে গিয়ে তোমরা কী করবে, মামণি?
রেহা-রাহি দুজনেই বলল, ‘আমরা খেলব, ঘুরব। আমরা অনেক আনন্দ করব।’
মা লিজা বললেন, ‘রেহা-রাহির দিন কাটে কীভাবে? ঘুম থেকে ওঠার পর স্কুল। এরপর বাড়িতে ফিরে ঘরে ঢোকা। দিন-রাত ঘরে। ঢাকা শহরের অন্য সব বাচ্চাদের মতো বন্দী জীবন। এই ইট-পাথরের শহরে ছেড়ে বাইরে ঘুরতে ভালো লাগে?’

রেহাদের ট্রেনে তখন হুইসেল বাজছে। যেকোনো সময় ট্রেন ছেড়ে দেবে।
এ সময় দুই হাত উঁচিয়ে রেহা-রাহি বলল,
‘ঈদ মোবারক। ঈদ মোবারক।’