ফাঁকা ঢাকায় ছুটির হাওয়া

ভিড় ঠেলে লঞ্চে উঠছে যাত্রীরা, গতকাল বিকেলে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। ছবি: প্রথম আলো
ভিড় ঠেলে লঞ্চে উঠছে যাত্রীরা, গতকাল বিকেলে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। ছবি: প্রথম আলো

প্রয়াত কবি আল মাহমুদের কবিতার পঙ্ক্তি ধার করে বলতে হয়, ‘ঝাঁক বাঁধা সারসের মতো উড়ে গেল মানুষের অগণিত মাথা’। ঈদুল ফিতর উদযাপনে গত বৃহস্পতি-শুক্রবার থেকেই ঢাকার মানুষের ঢল শুরু হয় গ্রামমুখী। ঈদের এখনো বাকি এক কিংবা দুই দিন। তবে রাজধানীজুড়ে ঈদের আমেজ শুরু হয়ে গেছে এর মধ্যেই। নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বাজার এলাকা বাদে প্রতিদিনের অসহনীয় যানজট অনেকটা কমে এসেছে। ছুটির হাওয়ায় ঢাকার বেশির ভাগ রাস্তা এখন ফাঁকা ফাঁকা।

সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে ধারণা করা হয়, ঈদে অর্ধেকের বেশি বাসিন্দা ঢাকা ছাড়েন। পবিত্র শবেকদর উপলক্ষে গতকাল রোববার ছিল সরকারি ছুটির দিন। এর আগে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অনেক মানুষ আগেভাগেই ঢাকা ছেড়েছেন। ছুটির হাওয়ার মধ্যে গতকাল সকাল থেকে মতিঝিল, কাকরাইল ও আগারগাঁওয়ের অফিসপাড়াগুলো ছিল প্রায় জনশূন্য। মিরপুর, আসাদগেট, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় চেনা ব্যস্ততা আর যানজট চোখে পড়েনি। তবে গুলিস্তান, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এলাকার বিপণিবিতানগুলোতে লোকসমাগম ও যানবাহনের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো।

রমজান মাসজুড়ে অসহনীয় যানজটের কথা স্মরণ করে গতকাল নগরের বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করা কয়েকজন বলেন, গন্তব্যে পৌঁছাতে আগের চেয়ে কম সময় লাগছে। আবার অনেককে পেশাগত কারণে ঢাকায় ঈদ করতে হচ্ছে। পরিবার-পরিজন ছাড়া ঈদ করার শূন্যতা থাকলেও ফাঁকা ঢাকা তাতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।

গাবতলী বাস টার্মিনালে বাসের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষা। ছবি: প্রথম আলো
গাবতলী বাস টার্মিনালে বাসের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষা। ছবি: প্রথম আলো

এদিন বেলা ১১টায় শেওড়াপাড়া থেকে আগারগাঁও, শিশুমেলা ও আসাদগেট হয়ে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে যান রোকনুজ্জামান। এই পথে কোনো যানজট না থাকায় মোটরসাইকেল মাত্র ১২ মিনিটেই গন্তব্যে পৌঁছে যান। তিনি বলেন, ‘অন্য সময় এই পথ আসতে হালকা যানজট ও সিগন্যাল মিলিয়ে অন্তত ৪৫ মিনিট লাগে। আজ একবারের জন্যও সিগন্যাল পাইনি। যানজট তো ছিলই না।’

সদরঘাট থেকে মিরপুর রুটে চলাচলকারী বিহঙ্গ পরিবহনের চালক আবদুল কাদের বলেন, মঙ্গলবারের মধ্যে ঢাকার সড়কগুলোতে যানজট একেবারেই থাকবে না।

ট্রেন ধরতে সপরিবার কমলাপুর রেলস্টেশনে। ছবি: প্রথম আলো
ট্রেন ধরতে সপরিবার কমলাপুর রেলস্টেশনে। ছবি: প্রথম আলো

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হাসিবুর রহমান ঈদের ছুটিতে কলকাতা যাচ্ছিলেন। অন্য দিনের মতো সময় নিয়ে মোহাম্মদপুর থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পথে রওনা হয়ে অনেক আগেই পৌঁছে যান তিনি। বলেন, ‘মোহাম্মদপুর থেকে বিমানবন্দরে যে আধা ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছানো যায়, এই ধারণাই আমার ছিল না।’

এদিকে দুপুরের দিকে দক্ষিণখানের সোহেলী আনার কবির নিজ গাড়িতে করে এক অসুস্থ আত্মীয়কে পল্লবীর বাসায় পৌঁছে দেন মাত্র ২৫ মিনিটে। সেখান থেকে গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটে কিছু কেনাকাটা করে বিকেলের মধ্যে বাসায় ফেরেন। প্রথম আলোকে সোহেলী বলেন, ‘আজকে আমি যে কাজ করেছি; স্বাভাবিক দিনে তা দুদিনে করতে হতো।’