হরিণের মাংস জব্দ এবং...

ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় হরিণের মাংস জব্দ ও কয়েকজন শিকারিকে আটক নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য মিলছে না। কোস্টগার্ড বলছে, হরিণের ২০ কেজি মাংস জব্দ করে আজ সোমবার বিকেলে তজুমদ্দিন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে মাংস হস্তান্তর করে। তবে ইউএনও বলছেন, তাঁর কাছে সাত কেজির মতো মাংস হস্তান্তর হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, ভোলার মনপুরা উপজেলার দুর্গম কলাতলি চরে একদল শিকারি নিয়মিত ঢালচর থেকে হরিণ শিকার করে। গতকাল রোববার রাতে কলাতলি চরের আবুল কালাম (কালাম কসাই), আবদুল আজিজ, ঋদুচন্দ্র, শরিফুল ইসলাম বাথান, কালু মাঝি, মাকসুদুর রহমান ও বাবর মাঝিসহ কয়েকজন কয়েকটি হরিণ শিকার শেষে জবাই করে। পরে ভোরে মণ দেড়েক হরিণের মাংস বাদশা মাঝির ট্রলারে করে তজুমদ্দিনের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। ওই ট্রলারে ৪ জন লোক ছিল। এদের মধ্যে নাজমুল, মঞ্জু ও মনিরের নাম জানা গেছে। ট্রলারটি তজুমদ্দিন উপজেলার স্লুইসগেট ঘাটে এলে কোস্টগার্ড ওই চার ব্যক্তি ও হরিণের মাংসসহ ট্রলারটি আটক করে।

বন বিভাগের শশীগঞ্জ বিট (তজুমদ্দিন উপজেলা) কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, হরিণের মাংসসহ চারজনের আটকের খবর পেয়ে তাঁরা ঘাটে বনপ্রহরী পাঠান। দেখেন, ঘটনা সত্য। ট্রলারে হরিণের মাংসসহ ৪ জন আটক। নিয়ম হচ্ছে পুলিশ-কোস্টগার্ড বন্যপ্রাণী, প্রাণীর মাংস ও শিকারিদের আটক করে বন্যপ্রাণী বা বন কর্মকর্তার কাছে ধরিয়ে দেবে। মাংস ময়নাতদন্ত শেষে মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে। আসামিদের পুলিশে দেবে। কিন্তু কোস্টগার্ড এর কোনো নিয়মপালন করেনি। উল্টো বনপ্রহরীরা ঘটনাস্থলে গেলে কোস্টগার্ডের পেটি অফিসার ও লোকজন বন বিভাগের প্রহরীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে স্থান ত্যাগ করতে বলেন। পরে মাংস ও লোকজন নিয়ে ট্রলার চালিয়ে কোস্টগার্ড মনপুরার দিকে চলে যায়। পরে বেলা আড়াইটার দিকে কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা স্লুইসগেট মেঘনার পূর্ব-দক্ষিণ পাশে বাসনভাঙার চর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ২০-২৫ কেজি হরিণের মাংস আটক করেছেন। মাংসের সঙ্গে থাকা লোকজন পালিয়েছে।

তবে দক্ষিণাঞ্চলীয় কোস্টগার্ডের অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট মো. ওয়াসিম বন বিভাগের কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, কোস্টগার্ড গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেঘনায় অভিযান চালিয়ে একটি হরিণের মাংসসহ একটি ট্রলারকে ধাওয়া করে। শিকারিরা ট্রলারটি তজুমদ্দিন উপজেলার বাসনভাঙার চরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়। পরে তাঁরা ট্রলার ও ২০ কেজি মাংস জব্দ করে তজুমদ্দিন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইউএনও) হাবিবুল বাশার রুমীর কাছে নিয়ে যান। তিনি মাংসগুলো পুঁতে ফেলবেন।

অভিযুক্ত কোস্টগার্ডের পেটি অফিসারের মুঠোফোনে একাধিকবার প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁর মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

এদিকে বন কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাকের পক্ষ থেকে কোস্টগার্ডকে বলা হয়েছে, আসামি ছাড়া তাঁরা হরিণের মাংস গ্রহণ করবেন না। পরে কোস্টগার্ড তজুমদ্দিনের ভারপ্রাপ্ত ইউএনও হাবিবুল বাশার রুমীর কাছে ওই মাংস হস্তান্তর করে। তবে হাবিবুল বাশার বলেন, ২০ কেজি নয়, কোস্টগার্ড তাঁর কাছে সাত কেজির মতো মাংস হস্তান্তর করেছে। এসব মাংস পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।