শাহবাগের শিশুপার্ক বন্ধ, আসবেন না

শিশুপার্কের বন্ধ ফটকে দর্শনার্থীর ভিড়। বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা ছবি: মাসুম আলী
শিশুপার্কের বন্ধ ফটকে দর্শনার্থীর ভিড়। বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা ছবি: মাসুম আলী

মা-বাবার সঙ্গে রাজধানীর টিকাটুলি থেকে শাহবাগের পুরোনো শহীদ জিয়াশিশু পার্কে ঘুরতে এসেছে দুই সহোদর আহনাফ ও আদিব। কিন্তু শিশুপার্ক যে বন্ধ, তাদের বাবা সেটা জানতেন না। এরপর আদিবের কান্না দেখে তার বাবা ইউসুফ বিপাকে পড়েন। আজ বৃহস্পতিবার এমন আরও বেশ কিছু দৃশ্য দেখা গেছে শিশুপার্কের সামনে।

ঈদের ছুটিতে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে শাহবাগের শিশুপার্কটি ছিল নগরবাসীর প্রধান আকর্ষণ। এ ঈদেও ব্যতিক্রম হয়নি। অগণিত মানুষ আসছে, হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। এসব শিশুর বাবা-মা না জেনে ওই শিশুপার্কে ঘুরতে আসেন। কিন্তু এখন শিশুপার্ক খোলা নেই, চলছে নতুন করে সংস্কারকাজ। প্রবেশপথে কর্তৃপক্ষ নোটিশে সে খবর টাঙিয়ে রেখেছে।

প্রায় ছয় মাস ধরে শিশুপার্ক বন্ধ, কিন্তু সে তথ্য জানেন না অনেক দর্শনার্থী। এতে প্রতিদিনই অনেকে এসে ফিরে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী বলেন, জনসাধারণের হয়রানি বন্ধে পার্কটি বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রচারণা চালানো উচিত।

হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাবা ও মেয়ে
হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাবা ও মেয়ে

আজ সকালে বাসাবো থেকে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে শিশুপার্কে এসেছিলেন আশিকুর রহমান। এসে পার্কটি বন্ধ দেখে হতাশ তিনি। মন খারাপ তাঁর ছোট ছেলেটির। আশিক বলেন, ‘ছোট বাচ্চারা কত আশা নিয়ে এসেছে। রাইডে উঠবে, আনন্দ করবে। এসে দেখি পার্ক বন্ধ। এখন বাচ্চাদের কী বলব? খুব খারাপ লাগছে।’ পরে তিনি ছেলেকে নিয়ে পার্কের সামনে থেকেই বাসে উঠে চিড়িয়াখানার দিকে চলে যান।

সোনারগাঁ থেকে আসা বাবুল নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘সকালে আকাশ পরিষ্কার দেখে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু এসে দেখি পার্কের কোনো অস্তিত্ব নেই। এটা যে বন্ধ, এমন ধরনের কোনো তথ্য পত্রপত্রিকায় পাইনি। বন্ধ জানলে অন্য কোনো বিনোদন পার্কে ছেলেকে নিয়ে যেতাম। এখন আবার সোনারগাঁ ফিরে যেতে হবে। আনন্দটা একবারের মাটি হয়ে গেল।’ বাবুল আরও বলেন, প্রতিবছর ঈদে ছেলেকে নিয়ে রাজধানীর শিশুপার্কে বেড়াতে আসেন। কিন্তু এবারে বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে। পার্কে প্রবেশের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে।

কিছুক্ষণ পরপরই সেখানে শিশুদের নিয়ে অভিভাবকেরা আসছেন। পার্ক বন্ধ দেখে অনেকে অবাক হচ্ছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। কেউ কেউ বন্ধ পার্কের ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে সন্তানদের ছবি তুলছেন। কেউবা পাশের ফুচকা-চটপটির দোকানে যাচ্ছেন, আচার কিনছেন, সন্তানের মন খারাপ কাটাতে খেলনা দিচ্ছেন। অনেকে হেঁটে চলে যাচ্ছেন জাতীয় জাদুঘরের গেটে।

চলছে সংস্কার কাজ
চলছে সংস্কার কাজ

তবে শিশুপার্ক থেকে হতাশ হয়ে জাদুঘরে গেটে গিয়ে আরও বেশি হতাশ হন দর্শনার্থীরা। আজ জাদুঘরও বন্ধ। অনেক দর্শনার্থী রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে। যোগাযোগ করলে জাদুঘরের কিপার শিহাব শাহরিয়ার জানান, গতকাল ঈদের দিন খোলা ছিল। এদিন শিশু-কিশোর, প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের জন্য বিনা মূল্যে জাদুঘর ঢুকতে পেরেছে। আজ জাদুঘরের সাপ্তাহিক বন্ধ। কাল শুক্রবার থেকে আবার যথাসময়ে চলবে।

শিশুপার্ক বন্ধ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী নুর মহম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গত জানুয়ারি মাসে দেশের আটটি দৈনিক কাগজে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। হয়তো নগরবাসীর চোখে পড়েনি।’ তিনি জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় শাহবাগ শিশুপার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ চলছে। এ কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। পার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজের সমাপ্তির পর শিশুপার্কটি সর্বসাধারণের জন্য খোলার বিষয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় জাদুঘরও বন্ধ। এখানেও দর্শনার্থীর উপস্থিতি দেখা গেছে
বৃহস্পতিবার জাতীয় জাদুঘরও বন্ধ। এখানেও দর্শনার্থীর উপস্থিতি দেখা গেছে

ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে ১৯৭৯ সালে পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য সরকারিভাবে দেশের প্রথম এই শিশুপার্ক ১৯৮৩ সাল থেকে শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তখন এর নামকরণ হয় ‘শহীদ জিয়া শিশুপার্ক’। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগে ১৫ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এ পার্ক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঢাকা সিটি করপোরেশন। শিশুপার্কটিতে ১২টি রাইড ছিল। যেখানে একটি খেলনা ট্রেন, একটি গোলাকার মেরিগো রাউন্ড রাইড ও একাধিক হুইল রাইড ছিল। ১৯৯২ সালে এ পার্কে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে সৌজন্য হিসেবে একটি জেট বিমান দেওয়া হয়। রাজধানী ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম খরচ হওয়ায় ধনী-গরিব প্রতিটি পরিবারের কাছে জনপ্রিয় ছিল।