'কাজ করতে দেন, দয়ার চাল লাগবে না'

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন মৎস্যজীবীরা। ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন মৎস্যজীবীরা। ছবি: প্রথম আলো

‘আমরা দিন আনি, দিন খাই। আমাদের কাজ করতে দেন। আমাদের দয়ার চাল লাগবে না।’

কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের ভাটিয়ারির বাসিন্দা নন্দ কিশোর জলদাস। আজ রোববার তাঁর মতো কয়েক হাজার মৎস্যজীবী (জেলে) সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরার সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সড়ক অবরোধ করেন। তখনই কথাগুলো বলছিলেন নন্দ কিশোর।

আজ সকাল ১০টার দিকে ‘উত্তর চট্টলা উপকূলীয় মৎস্যজীবী জলদাস কল্যাণ ফেডারেশন’–এর ব্যানারে তিন হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট-বন্দর সড়কের মাথায় অবরোধ করেন। এসব জেলে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত ৩৮টি গ্রামের বাসিন্দা।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, সামুদ্রিক ছোট মাছ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত ২০ মে থেকে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা ৬৫ দিন সমুদ্রে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এ সময়ের মধ্যে তালিকাভুক্ত জেলেদের জন্য ৮০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে ৪০ কেজি করে চাল সীতাকুণ্ডে পৌঁছেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল সোয়া নয়টার দিকে বাস ও ট্রাকে করে জেলেরা মহাসড়কের ফৌজদারহাট বন্দর সড়কের মাথায় জড়ো হতে থাকেন। সকাল ১০টার দিকে মহাসড়কে মানববন্ধন শুরু করেন তাঁরা। সকাল সোয়া ১০টার দিকে বৃষ্টির মধ্যেও মহাসড়কে ব্যানার নিয়ে অবরোধ করেন। এ সময় মহাসড়কের উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়, তবে তারা মানববন্ধনে বাধা সৃষ্টি করেনি। বেলা ১১টার দিকে অবরোধস্থলে আসেন সীতাকুণ্ডের সাংসদ দিদারুল আলম। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত অবরোধস্থলে গিয়ে বক্তব্যের পর দুপুর পৌনে ১২টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন জেলেরা।

এ সময় সাংসদ দিদারুল আলম বলেন, মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শুধু সীতাকুণ্ডের জন্য নয়, এটি সারা দেশের জেলেদের ওপর কার্যকর রয়েছে। তবু জেলেদের স্মারকলিপি দিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেবেন।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, জেলেদের দাবির সঙ্গে তিনি একমত। আগামীকাল সোমবারের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হলে আগামী মঙ্গলবার গণ–অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে। এরপর তিনি অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

মৎস্যজীবীদের অবরোধে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আটকে যায় শত শত যানবাহন। ছবি: প্রথম আলো
মৎস্যজীবীদের অবরোধে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আটকে যায় শত শত যানবাহন। ছবি: প্রথম আলো

ফেডারেশনের সভাপতি লিটন জলদাস বলেন, আগে শুধু ইলিশ ধরাকে কেন্দ্র করে মা ইলিশ নিধন ও জাটকা নিধন বন্ধে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাঁরা সেটা মেনে নিয়েছেন। এবার সরকার সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় তাঁরা আর্থিকভাবে ব্যাপক সংকটের মুখে পড়ছেন। তাই তাঁরা এ নিষেধাজ্ঞা মানছেন না।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, সামুদ্রিক ছোট মাছ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। এ সময়ে ছোট মাছের প্রজননের সময়। এ সময়ে আগে বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকত। এবার সরকার সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এবার সীতাকুণ্ডে ৪ হাজার ৮০৫ জনের জন্য প্রথম কিস্তিতে প্রতি তালিকাভুক্ত জেলের বরাদ্দের ৪০ কেজি চাল সীতাকুণ্ডে পৌঁছেছে। কিন্তু জেলেরা নিচ্ছেন না।

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক সুমন বণিক বলেন, জেলেরা দেড় ঘণ্টার মতো মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন। পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে অবরোধ তুলে নেন। তাঁরা মহাসড়ক সচল করার চেষ্টা করছেন।