এই নাম নিতেও ঘৃণা লাগে: শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই নাম নিতেও ঘৃণা লাগে। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আজ হোক কাল হোক এক দিন না একদিন তাঁর (তারেক রহমান) শাস্তি কার্যকর হবে।’

আজ রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ড সফর করে গতকাল শনিবার দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। আজ তিনি ওই সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। আজ সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে প্রশ্নে শেখ হাসিনা একুশে আগস্ট হত্যা মামলার প্রসঙ্গ আনেন। ওই মামলায় ঘোষিত রায়ে তারেক রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

শেখ হাসিনা বলেন, ওই একুশে আগস্টের হামলায় আইভি রহমানসহ ২৮ জন মানুষ নিহত হন। শতাধিক মানুষ আহত হন। শুধু একুশে আগস্ট নয়, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গেও যুক্ত সে (তারেক রহমান)। শেখ হাসিনা বলেছেন, এসব ব্যক্তির জন্য অনেকের মায়াকান্না দেখছি। আমরা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। তবে ওরা অনেক টাকার মালিক। সব সময় চেষ্টা করে ঝামেলা সৃষ্টি করার। আমি সেখানে গেলেও ঝামেলা সৃষ্টি করতে চায়। তবে যাই হোক, তাঁর শাস্তি কার্যকর হবে।

আজ সংবাদ সম্মেলনে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে ফিনল্যান্ড থেকে আনতে যাওয়ার বিমানের উড়োজাহাজের পাইলটের পাসপোর্ট ছেড়ে কাতার যাওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা ইমিগ্রেশনের দুর্বলতা। শেখ হাসিনা বলেন, দিনে দিনে ভিআইপি ও ভিভিআইপির সংখ্যা বাড়ছে। আরও যত ‘ভি’ লাগুক না কেন কাউকে ছাড়া হবে না।

১২ দিনের সরকারি সফরের বিষয়ে দেশবাসীকে অবহিত করতে বিকেল পাঁচটটার দিকে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তিন দেশ সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ঐতিহাসিক পরম্পরা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সময় এবং পরে আমাদের সহায়তা করেছে জাপান। এবারের সফরে আড়াই শ কোটি ডলারের চুক্তির কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

জাপানের সঙ্গে মাতারবাড়ি, সাবরাং প্রকল্পের কথা স্মরণ করে দেন তিনি। বলেন, সাবরাংয়ে টুরিস্ট প্লেস করবে সরকার। এটা পুরোপুরি বিদেশিদের জন্য করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সৌদি আরবে ওআইসির সম্মেলন এবং সেখানে তাঁর সফরের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

ফিনল্যান্ড সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে তারা খুব দক্ষ। তাদের একটি দল আসবে। তাদের বিনিয়োগে আমরা আহ্বান জানাই। এসব খাতে সম্ভাবনা করতে তারা বাংলাদেশে আসবে।

শেখ হাসিনা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, চীনে সফর হবে। জুলাইয়ে এ সফর হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে একাধিক প্রশ্ন আসে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান, চীন সরকারসহ বিভিন্ন সরকারের সহায়তা আছে। সমস্যা হলো মিয়ানমারকে নিয়ে। সবাই চায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরুক। মিয়ানমার নিতে চায় না। এখানেই সমস্যা। তাদের কাছে থেকে সাড়াটা পাই না।

আসছে বাজেটে সামাজিক কল্যাণ খাতে সরকারের অগ্রাধিকার কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাংলাদেশে বিশাল। প্রতিবন্ধী, বিধবা, অসহায় দারিদ্র্য পীড়িত মানুষের জন্য সরকার নানা কর্মসূচি নিয়েছে। এসব অব্যাহত থাকবে। উন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা কম। তারা অনেক কিছু পারে। অনেক সম্পদ তাদের। কিন্তু আমাদের মতো সম্পদ ও বিপুল জনসংখ্যা থাকলে কী হতো সেটাই প্রশ্ন।


ফিনল্যান্ডে থাকার সময় প্রধানমন্ত্রী ৪ জুন দেশটির প্রেসিডেন্ট সওলি নিনিসতোর সঙ্গে বৈঠক করেন। পরদিন সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের দেওয়া এক সংবর্ধনায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।

গত ২৮ মে প্রধানমন্ত্রী তিন দেশ সফরে টোকিওর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। সেখানে চার দিনের সফরে শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মধ্যে বৈঠক শেষে দুই দেশ আড়াই শ কোটি মার্কিন ডলারের ৪০তম ওডিএ চুক্তি স্বাক্ষর করে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ‘ফিউচার ফর এশিয়া’ বিষয়ক নিক্কেই সম্মেলনে যোগ দেন। ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি জাপানের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও গোলটেবিল বৈঠক করেন।

পাশাপাশি হোলি আর্টিজান হামলায় হতাহতদের পরিবার এবং জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা শেখ হাসিনার সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেন। ৩১ মে টোকিও থেকে সৌদি আরবে তিন দিনের সফরকালে প্রধানমন্ত্রী মক্কায় অনুষ্ঠিত ১৪তম ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। এ ছাড়া তিনি মক্কায় পবিত্র ওমরাহ পালন এবং মদিনায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন।