পারাপার ছাড়াই ৯ বছর ধরে পদচারী-সেতু

ধানমন্ডির শংকর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পদচারী–সেতুর কেবল স্তম্ভ বসানো হয়েছে। গেল ৯ বছরে পদচারী–সেতুটি সম্পন্ন করতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সিটি করপোরেশন।  ছবি: প্রথম আলো
ধানমন্ডির শংকর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পদচারী–সেতুর কেবল স্তম্ভ বসানো হয়েছে। গেল ৯ বছরে পদচারী–সেতুটি সম্পন্ন করতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সিটি করপোরেশন। ছবি: প্রথম আলো

প্রায় ৯ বছর ধরে পদচারী-সেতুটি সড়কের দুই পাশের স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তবে এতে পারাপারের কোনো ব্যবস্থা নেই। আর নিচে ব্যস্ত সড়কে পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হচ্ছেন।

বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের কারণে শংকর বাসস্ট্যান্ডের এই পদচারী-সেতুর কাজ আটকে ছিল বলে জানায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সম্প্রতি ট্রান্সফরমার সরিয়ে সেতুটি সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ধানমন্ডির শংকর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানজট এড়াতে এবং গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ইউটার্ন বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশের ‍ট্রাফিক বিভাগ। সড়কে পথচারীদের পারাপারের জায়গাও আটকে দেওয়া হয়েছে। তবে এ অংশে কোনো ট্রাফিক পুলিশ নেই। নেই জেব্রা ক্রসিং। প্রতিবন্ধকের দুই পাশের অল্প ফাঁকা জায়গা দিয়ে পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। পদচারী-সেতুর পশ্চিমে নিজামস শংকর প্লাজা নামের একটি বিপণিবিতান। পূর্বে বাংলাদেশ মেডিকেল, ইবনে সিনা হাসপাতাল, আহমেদ মেডিকেল, ছায়ানট ভবন। সড়কের উভয় পাশে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আরও আছে অসংখ্য খাবারের দোকান। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, রোগী এবং তাঁদের স্বজনদের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়।

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, পথচারীদের পারাপারের সুবিধার্থে ২০১১ সালের দিকে শংকর বাসস্ট্যান্ডে পদচারী-সেতু তৈরির পরিকল্পনা করে সিটি করপোরেশন। তখন সড়কের দুই পাশে স্তম্ভ বসানো হয়। তবে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও বৈদ্যুতিক তারের কারণে কাজ এগোয়নি। কর্মকর্তারা বলেন, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) পদচারী-সেতুটি তৈরির কাজ শুরু করে। এর আংশিক কাজ করার পর তাঁরা দেখতে পান, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) বৈদ্যুতিক তারের স্পর্শ লাগছে সেতুতে। যেকোনো সময় এটি বিদ্যুতায়িত হয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে। তাই তখন কাজ থামিয়ে দেওয়া হয়।

ধানমন্ডির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফসানা হক বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে এই পদচারী-সেতুর ফাঁকা কাঠামোটি দেখতে পাচ্ছি। রাস্তার ওপর লোহার পিলারও রাখা আছে। এর কাজ শুরুও হয় না আবার শেষও হয় না। মানুষ নিচে দিয়েই রাস্তা পারাপার হয়।’

>

২০১১ সালে শংকর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পদচারী-সেতুটির কাজ শুরু হয়
তবে ট্রান্সফরমারের সংস্পর্শে আসায় তখন কেবল স্তম্ভ বসিয়ে কাজ বন্ধ হয়ে যায়

শংকর প্লাজার সামনে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দোকান করছেন আল আমিন বুক স্টলের আমির হোসেন। তিনি বলেন, এ রাস্তায় মানুষ ও গাড়ির ভিড় বেশি থাকে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, স্কুলের বাচ্চারা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হয়। বেশ কয়েকবার তিনি এখানে করপোরেশনের লোকজনকে মাপজোখ করতে দেখেছেন। কবে নাগাদ এর কাজ শেষ হবে, তা কেউ বলতে পারে না।

ডিএসসিসির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (অঞ্চল-১) মুন্‌সী আবুল হাসেম বলেন, ‘শংকরে পদচারী-সেতুটির কাজ শুরু হয় ২০১১-১২ সালের দিকে। আমি নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করি ২০১৭–১৮ সালে। আমার সময়ে এর নতুন কোনো কাজ করা হয়নি। সেতুটির ওপর উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুতের ও পাশের ট্রান্সফরমারের কারণে সেখান দিয়ে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। এই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তার ও ট্রান্সফরমার সরিয়ে নিতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ডিপিডিসিকে চিঠি দেওয়া হয়। তারা এটি সরানোর জন্য ডিএসসিসির কাছ থেকে টাকা চায়। সে সময় ডিএসসিসির আর্থিক সংকট ছিল। ডিএসসিসি এ অর্থ দিতে পারেনি বলে তা সরানো হয়নি।

এই পদচারী-সেতুর সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে ডিএসসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী (অঞ্চল-১) মোহাম্মদ শফিউল্লাহ বলেন, ‘বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার অপসারণ করা ছাড়া এই কাজ শেষ করা যাবে না। এটি সরিয়ে নেওয়ার ব্যয় জানতে ডিপিডিসিকে চিঠি দিয়েছি। তারা আমাদের কাছে ৪৫ লাখ ৩৪ হাজারের মতো টাকা চেয়েছে। ইতিমধ্যে এই অর্থ ডিএসসিসির উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’ এই নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ট্রান্সফরমার সরানোর অর্থ অনুমোদন হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই এই পদচারী–সেতুর কাজ শেষ হবে।