মাদারীপুরে উপজেলা আ. লীগের ১৭ নেতাকে বহিষ্কারের সুপারিশ

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কাজল কৃষ্ণ দের বিরোধিতা করায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেনসহ ১৭ জনকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া জেলা কমিটির ছয়জনকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে সুপারিশ পাঠিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এই বহিষ্কারের বিষয়ে কথা বলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৮ জুন মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে। তাঁর বিপক্ষে মাদারীপুর-২ আসনের সাংসদ ও সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের ছোট ভাই ওবাইদুর রহমান খান বিদ্রোহী প্রার্থী হন। এতে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নেন জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। পরে তাঁদের কারণ দর্শানোর জন্য বলা হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। পরে গতকাল সোমবার কার্যনির্বাহী কমিটি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ আবুল বাশারসহ ছয়জন এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেন সেলিমসহ ১৭ জনকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠান।

বহিষ্কারের তালিকায় থাকা নেতাদের মধ্যে আছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেন, সহসভাপতি কুদ্দুস মল্লিক, মজিবর রহমান খান, সোহরাব খান, সিরাজুল ইসলাম আবুল, ফারুক খান, রশিদ গৌড়া, সৈয়দ মমসাদউজ্জামান, নজরুল ইসলাম মুন্সী, আলী ইসলাম তালুকদার, রেজাউল আলম বাচ্চু খান, মোহাম্মদ আলী মুন্সী, মনির হোসেন হাওলাদার, দেলোয়ার খান, জাহাঙ্গীর জমাদ্দার, মাহবুব হাওলাদার ও মজিবর রহমান। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ আবুল বাশার, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার খায়রুল হাসান, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেন সেলিম, কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুর রব খান ও নূরুল আলম বাবু চৌধুরীকেও বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা অভিযোগ করেন, স্থানীয় সাংসদ শাজাহান খানের ছোট ভাই ওবাইদুর রহমান খান আনারস প্রতীক নিয়ে নৌকা মার্কার বিরোধিতা করছেন। এই ক্ষমতাবান চক্র আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় এত দিন নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, এখন তাঁরা নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতে নৌকার বিরোধিতা করছেন। এই কাজে দলীয় যেসব নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা কমিটির কার্যনির্বাহী সভায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ ১৭ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা কমিটির ছয়জনকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগের বিষয়ের প্রমাণও পাঠানো হয়েছে।

বহিষ্কারের তালিকায় থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগ আমাদের কীভাবে বহিষ্কার করে? তাদের কি বহিষ্কার করার ক্ষমতা আছে? তাঁরা সর্বোচ্চ আমাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ দিতে পারেন। তাঁরা সংবাদ সম্মেলনে যা বলেছেন, তা ভিত্তিহীন। এটা তাদের পাগলামি।’ তিনি আরও বলেন, সারা দেশে আওয়ামী লীগ-আওয়ামী লীগ নির্বাচন হচ্ছে। এখানে বিরোধিতা করার কিছু নেই। জেলা কমিটি রাজনৈতিক উদ্দেশে তাদের বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজল কৃষ্ণ দে, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও পৌর মেয়র খালিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পাভেলুর রহমান শফিক খান, দপ্তর সম্পাদক গোলাম মাওলা আকন্দ, আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ ফরাজী, সুজিৎ চ্যাটার্জিসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।