এখন কোথায় যাবে অসহায় পরিবারটি

স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর ভিটেমাটি বিক্রি করে চিকিৎসা করান মোস্তফা মোল্লা। আশ্রয় নেন শ্বশুরবাড়ির সামনে এক টুকরো খাসজমিতে। সেখান থেকেও পরিবারসহ উচ্ছেদ হয়েছেন মোস্তফা।

ঘটনাটি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের। গত ১৩ মে ওই খাসজমি থেকে পরিবারটির কুঁড়েঘর উচ্ছেদ করেন শেখ নূর ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি মোস্তফার স্ত্রী সুফিয়া বেগমের বোনের ছেলে। ঘটনার সময় সুফিয়া বেগমকে তিনি মারধরও করেন। পরদিন থানায় অভিযোগ দেয় পরিবারটি। তবে ‘মীমাংসা’ করে দেওয়ার কথা বলে তখনই মামলা নেওয়া হয়নি। প্রায় এক মাস পর ৮ জুন মামলা নেওয়া হয়। তবে এখনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।

পরিবারটির অভিযোগ, তাঁদের পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। এ কারণে তাঁরা সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছেন না। অন্যদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ নূর ইসলামের পক্ষ নিয়েছে। এ কারণেই মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করেছে।

সুফিয়া বেগম জানান, পাঁচ বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। কোনো ভাই না থাকার সুযোগে বাবা এলাই বকসের কাছ থেকে সব সম্পত্তি কৌশলে লিখে নিয়েছেন বোনের ছেলে নূর ইসলাম। তিনিসহ অন্য বোনেরা বাবার বাড়ির সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আবার স্বামীর চিকিৎসার জন্য শ্বশুরবাড়ির সবকিছু হারিয়েছেন। এরপর প্রায় চার বছর আগে বাবার বাড়ির সামনের ওই খাসজমিতে আশ্রয় নেন। সেখানে কুঁড়েঘর বেঁধে বসবাস করে আসছিলেন। বোনের ছেলে নূর ইসলাম তাঁদের মারধর করে তুলে দেওয়ার পর অন্য এক বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

ওদিকে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর মোস্তফা মোল্লার দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। এরপর সংসারের হাল ধরেন স্ত্রী সুফিয়া বেগম নিজেই। ইউনিয়ন পর্যায়ে কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পের কাজ করেন। যা পান তা দিয়েই সংসার চলে।

সম্প্রতি সরেজমিনে চাঁদখালী ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে যান এই প্রতিবেদক। স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, ওই জায়গাটি খাসজমি। সুফিয়া বেগমদের ওই জায়গা থেকে উচ্ছেদ করেই নূর ইসলাম সেখানে দখল নিয়েছেন, ঘর তৈরি করছেন। জায়গাটি খাস সম্পত্তি হওয়ার পরও সেখান থেকে কিছু জমি ছেড়ে না দেওয়ায় অনেকে নূর ইসলামের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু নূর ইসলামের ব্যবহার খারাপ থাকায় এ ব্যাপারে কেউ তাঁর সঙ্গে কথা বলার সাহস পান না। কিছু জমি ছেড়ে দিলে নূর ইসলামের কোনো ক্ষতি হবে না বলে মনে করেন তাঁরা।

নূর ইসলামের বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, বেশ বড় জায়গা নিয়ে আধা পাকা বাড়িটি। বাড়ির মধ্যে রয়েছে গাছগাছালি। বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি। নাম ধরে ডাকতেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন নূর ইসলাম। সামনের খালপাড়ের ওই জমি খাস সম্পত্তি বলে তিনিও স্বীকার করেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুফিয়া বেগমদের ঘর ভাঙচুর করা হয়নি। নিজের জমির সামনে বলে তিনি জায়গাটা দখলে নিয়েছেন। বিষয়টি থানা থেকে তদন্ত করে গেছে। তাই এ নিয়ে এর বেশি কোনো কথা বলতে চান না তিনি।

দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিষয়টি মীমাংসার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল স্থানীয় ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান সরদারের ভাই রঞ্জু সরদারকে। কথা হয় তাঁর সঙ্গেও। তিনি বলেন, ওই জায়গার কিছু অংশ নিয়ে ঘর করেছিলেন সুফিয়া বেগম। কিন্তু তাঁদের ঘর ভাঙচুর করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টির মীমাংসা করে সুফিয়াকে একটি ঘরের জায়গা দেওয়া যায় কি না, তা দেখবেন তিনি।

গত ঈদের দুই দিন পরই উভয় পক্ষকে নিয়ে বসতে চেয়েছিলেন রঞ্জু সরদার। কিন্তু নূর ইসলাম কোনো জমি ছাড়তে রাজি নন। তাই ওই মীমাংসার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এরপর বিষয়টি রঞ্জু সরদান থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানান। তারপরই থানায় নূর ইসলামের বিরুদ্ধে মারপিটের অভিযোগে মামলা নেওয়া হয়েছে।

পাইকগাছা থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ বলেন, খুবই মানবিক একটা বিষয়। এ কারণে তাঁরা প্রথমে চেষ্টা করেছিলেন সুফিয়ার পরিবারের জন্য একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়া যায় কি না। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একজনকে। কিন্তু তিনি মীমাংসা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এরপর নূর ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়েছে। এখন তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।