নবাবি দিনের স্মৃতির আলো

এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘরের প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন এক দর্শক।  ছবি: প্রথম আলো
এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘরের প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন এক দর্শক। ছবি: প্রথম আলো

প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে ঢাকা শহর, তাতে ৪০০ বছরের পুরোনো এই রাজধানীর অতীত ঐতিহ্যের রূপ বিশেষ চোখে পড়ে না। অতি অল্প যে কয়েকটি প্রত্নস্থাপনা শহরের প্রাচীনত্বের প্রতিনিধি হয়ে তেল ফুরানো প্রদীপের সলতের মতো টিমটিম করছে, সেগুলোকে টিকিয়ে রাখারও তেমন তাগিদ নেই। চলতি সময়ে এর উজ্জ্বল ব্যতিক্রম নিমতলীর দেউড়ি। বিদ্বজ্জনদের সংগঠন এশিয়াটিক সোসাইটি তাদের দুই ভবনের মাঝখানে থাকা প্রায় আড়াই শ বছরের পুরোনো এই স্থাপনাকে তার মূল অবয়বেই মজবুত করে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেছে জাদুঘর। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত বছরের জানুয়ারিতে ‘এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘর’ উদ্বোধন করেছেন।

ব্রিটিশ ঐতিহাসিক এফ বি ব্রাডলি বার্ট ঢাকাকে বলেছিলেন ‘প্রাচ্যের রহস্যনগরী’। সেই নগরীর ক্রমেই ফিকে হয়ে আসা রহস্যের খানিক ধূপছায়া লেগে আছে প্রাচীন স্থাপনাগুলোয়। নিমতলীর বিলুপ্ত প্রাসাদের টিকে থাকা প্রধান ফটকটিতে প্রবেশ করলে সে রকম এক অনুভূতি হবে। এর মোগল রীতির নকশা, গৈরিক রং, উঁচু ছাদ, নবাবি জমানার স্মৃতিমেদুর ছবি, পুরোনো নিদর্শন ও ডিজিটাল তথ্যপদ্ধতিতে উপস্থাপিত বিপুল তথ্য ও চিত্র আলো ফেলবে অতীতে। জাদুঘরটি প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা অবধি খোলা থাকে।

এই জাদুঘরের বিশেষ আকর্ষণ পঞ্চম গ্যালারির নায়েব নাজিম নুসরাত জং (১৭৮৫-১৮২২) এর দরবারের ডিওরমা। ঢাকার ১৬ জন নায়েব নাজিমের মধ্যে নবাব নুসরাত জং ত্রয়োদশতম। জাদুঘরের কিউরেটর জাহাঙ্গীর হোসেন জানালেন, নবাবের দরবারের একটি ছবি পাওয়া গিয়েছিল। সেটি অনুসরণ করেই এই ডিওরমাটি তৈরি। এখন পর্যন্ত জাদুঘরে নিদর্শন আছে ৮৩ টি। ঢাকার অনেক বনেদি পরিবারের কাছে এখনো অনেক প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে। যাঁদের কাছে এমন নিদর্শন আছে, তাঁরা যদি জাদুঘরকে সেগুলো দান করতেন, তবে মূল্যবান এসব প্রাচীন সম্পদ যেমন উপযুক্ত যত্নে সংরক্ষিত থাকত, তেমনি জাদুঘরের সঞ্চয়ও সমৃদ্ধ হতো।

দেউড়িটি তিনতলা। তাতে মোট পাঁচটি গ্যালারি। ঢাকা সুবা বাংলার রাজধানী ছিল ১৭১৬ সাল পর্যন্ত। এরপর থেকে শুরু হয় নায়েব-নাজিম বা উপনবাবদের শাসন, চলে ১৮৪৩ সাল পর্যন্ত। এই জাদুঘরে ১৭০০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আর্থসামাজিক অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।

হাইকোর্ট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় অংশজুড়ে নায়েব-নাজিমদের বসবাসের জন্য ঢাকার ক্ষমতা গ্রহণকারী ব্রিটিশরা ১৭৬৫-৬৬ সালে তৈরি করেছিল নিমতলী প্রাসাদ। তখন নায়েব-নাজিম ছিলেন জসরত খান। নবাবদের নবাবি ছিল নামমাত্র। ব্রিটিশ মাসোহারানির্ভর ছিলেন তাঁরা। তবু তাঁরা দরবার বসাতেন প্রাসাদে। মামুলি বিচার-আচার হতো। তবে ঢাকার সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তাঁরা। সেসব স্মৃতিই দর্শকদের মনে ফিরিয়ে আনবে এই জাদুঘর।